রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুরুতর আহত অবস্থায় আনা ১৬৭ জনের অধিকাংশেরই মাথার খুলি ছিল না। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এ তথ্য জানান হাসপাতালটির নিউরোট্রমা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমান।
তিনি জানান, ১৮ জুলাই থেকে হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ রোগী আসতে থাকে। তাদের মাথা, মুখ, গলা, বুক, পিঠ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বড় আকারের গুলি ও পিলেটবিদ্ধ জখম ছিল। ৪ ও ৫ আগস্ট আসা রোগীদের অধিকাংশই মাথা ও বুকে গুলিবিদ্ধ ছিলেন। এ সময় বহির্বিভাগে ৫৭৫ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সিট সংকট ও গুরুতর রোগীর চাপের কারণে অনেককে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। গুরুতর আহত ১৬৭ জনকে ভর্তি করা হলেও তাদের মধ্যে বেশিরভাগের মাথার খুলি ছিল না। চারজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরও ২৯ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৭ জনকে পাঠানো হয় থাইল্যান্ডে।
ডা. মাহফুজুর রহমান তার জবানবন্দিতে বলেন, আমার নেতৃত্বে ৩৩টি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। প্রায় ১৫টি গুলি ও পিলেট আহতদের শরীর থেকে বের করা হলেও অনেকগুলো অপসারণ করা যায়নি। অনেক সময় আহতরাই নিজেদের শরীর থেকে বের হওয়া গুলি সংগ্রহ করে নিয়ে যান। তিনি আরও জানান, ১৯ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা নতুন গুলিবিদ্ধ রোগীদের ভর্তি না করার জন্য চাপ দেন এবং নির্দেশ দেন ভর্তি রেজিস্টারে গুলিবিদ্ধের পরিবর্তে সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কারণ উল্লেখ করতে।
একই দিনে আরও কয়েকজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেন। ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না জানান, আন্দোলনের দিন তাদের হাসপাতালে অসংখ্য আহতকে আনা হলেও পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা চিকিৎসায় বাধা দেয় এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে। এমনকি হাসপাতালের গেট অবরোধ করে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে বা বের হতে দেয়নি। এতে অনেক রোগীকে বিকল্প পথে স্থানান্তর করতে হয়েছে।
এছাড়া আন্দোলনে নিহত শহীদ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল আদালতে জানান, ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। তিনি বর্ণনা দেন কীভাবে ছেলেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঘরে ফেরত আনা হয় এবং মাথায় গুরুতর ক্ষত থাকার কারণে তার মৃত্যু ঘটে।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলায় দোষ স্বীকার করে সহযোগিতার আবেদন করেন সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন, যা আদালত মঞ্জুর করেন। এরপর ৩ আগস্ট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।