বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, গণতন্ত্রের মূল ভাষা হলো—জনগণ যাকে চাইবে তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে মার্কার মধ্যে ভোট দিলেও আসলে কে এমপি হবে তা মানুষ জানে না।
শনিবার কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পিআরে কোনো গণতন্ত্র নেই। যারা এখনো পিআর-পিআর বলে চিৎকার করছেন, তাদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয়; বরং এসব বলে কিছু পাওয়ার চেষ্টা। যারা সত্যিকারের গণতন্ত্র চান, আসুন আলোচনায় বসি—কীভাবে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা যায়।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, এদেশের মানুষ দীর্ঘ ১৬ বছর রক্ত দিয়েছে ভোটাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে কেবল ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়েই।
তার অভিযোগ, শেখ হাসিনার আমলে রাজনীতি বন্দি ছিল কারাগারে, নির্বাসিত ছিল লন্ডন ও শিলংয়ে। দেশকে করদ রাজ্য বানাতে তিনি সাংবিধানিকভাবে গণতন্ত্রকে সমাহিত করেছেন, নিশিরাতের নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন। তার শাসনে গণতন্ত্র কারাগারে বন্দি ছিল।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। ডিসেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এখন থেকেই জনগণের কাছে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে হবে।
আওয়ামী লীগের পরিচয় তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই প্রমাণ করেছেন তিনি এই দেশের মানুষ নন। আওয়ামী লীগও দেখিয়েছে তারা কোনো জাতীয় রাজনৈতিক দল ছিল না, বরং বিদেশি একটি দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করেছে। তার মতে, আওয়ামী লীগ আসলে ছিল একটি মাফিয়া শক্তি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও ফ্যাসিস্ট সংগঠন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললেই মানুষকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হতো। সরকারের সমালোচনা করলেই সাইবার সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তার করা হতো। তারা জনগণের বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছিল।
তিনি মনে করেন, আর যেন শেখ হাসিনার মতো কোনো স্বৈরশাসকের উত্থান না ঘটে, সেজন্য দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।
চকরিয়া সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এনামুল হক। উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব এম মোবারক আলী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরীসহ আরও অনেকে।
দীর্ঘ ৫ বছর পর আয়োজিত এই জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ছিল ভিন্ন রকম উদ্দীপনা। অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেন। গাড়ির বহর নিয়ে, গান বাজিয়ে, ঢোলের তালে নাচতে নাচতে তারা সম্মেলনস্থলে এসে যোগ দেন।