দেশীয় গ্যাস উৎপাদন ক্রমাগতভাবে কমছে, অন্যদিকে ঘাটতি পূরণে দ্রুত বাড়ছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি। তুলনামূলক বেশি দামে এলএনজি কিনে কম দামে সরবরাহ করতে গিয়ে সরকারকে নিয়মিত লোকসান গুনতে হচ্ছে।
২০১৮ সাল থেকে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি শুরু করে। এরপর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত সাত বছরে এলএনজি আমদানিতে খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, এমন তথ্য জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
তাদের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশি ও বিদেশি কোম্পানি মিলে গ্যাস উৎপাদন করেছিল ২ হাজার ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট। একই মাসে এলএনজি আমদানি হয় ৪৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে ফেব্রুয়ারিতেই আমদানিকৃত এলএনজি বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, যেখানে দেশীয় উৎপাদন কিছুটা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুটে। মার্চে দেশীয় গ্যাস ছিল ২ হাজার ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট আর এলএনজি ছিল ৬২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এপ্রিলে দেশীয় উৎপাদন নেমে আসে ১ হাজার ৮৬৬ মিলিয়নে এবং এলএনজি আমদানি বেড়ে হয় ৮৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এভাবেই পরবর্তী মাসগুলোতে দেখা যায়, স্থানীয় উৎপাদন হ্রাস পেলেও এলএনজি আমদানির পরিমাণ বেশিরভাগ সময়েই বেড়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে যেখানে ৪১ কার্গো এলএনজি আমদানি হয়েছিল (২.৫২৭ মিলিয়ন টন), ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৯৪ কার্গোতে (৫.৮০৮ মিলিয়ন টন)। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালে এ সংখ্যা আরও বেড়ে ১২৪–১২৬ কার্গোতে পৌঁছাতে পারে।
খরচের দিক থেকেও বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। যেমন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১ হাজার ৮১২ কোটি টাকার এলএনজি আমদানি হয়েছিল, যেখানে ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরবর্তী বছরগুলোতে খরচ এবং ভর্তুকি দুই-ই ক্রমেই বেড়েছে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এলএনজি আমদানির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকায়, আর ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত তিন বছরে দেশীয় কূপ থেকে উৎপাদন প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট কমেছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে গ্যাস ব্যবহারের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে বাড়তি এলএনজি আমদানির পরও সরবরাহ ঘাটতি পুরোপুরি কাটানো যাচ্ছে না।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, “দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে আমরা ১০০টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছি। এর মধ্যে কয়েকটি কূপ থেকে ইতোমধ্যে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে ধীরে ধীরে এলএনজি নির্ভরতা কমানো।”