Sunday, August 24, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় ভয়াবহ অপুষ্টি সংকট, সোয়া তিন লাখ শিশু জীবনঝুঁকিতে

গাজায় ভয়াবহ অপুষ্টি সংকট, সোয়া তিন লাখ শিশু জীবনঝুঁকিতে

ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মারাত্মক খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ। আলজাজিরার তথ্যমতে, শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেল তিনটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিজনিত কারণে আরও আট শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হামলা শুরুর পর প্রায় দুই বছরে এ নিয়ে অন্তত ২৮১ জন অপুষ্টিতে মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ১১৪ জন শিশু।

গাজার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া ও নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের শিশু হাসপাতালের পরিচালক আহমদ আল-ফারা জানান, কেবল শিশু নয়, গাজায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীও ভিন্ন মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের মতে, এ সংকট সামাল দিতে অন্তত ১০টি নতুন হাসপাতাল প্রয়োজন। আল-ফারার ভাষায়, “আমাদের হাসপাতালে ভর্তি ১২০ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। এ অবস্থার প্রভাব তাদের সারা জীবন বহন করতে হবে।”

সম্প্রতি দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজার নগরাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছে, যেখানে অন্তত ৫ লাখ ১৪ হাজার মানুষ এ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন। চলমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসের শেষ নাগাদ দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসেও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে আইপিসির এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরায়েল গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ পরিস্থিতিকে ‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়’ ও ‘মানবতার ব্যর্থতা’ আখ্যা দিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্কও গাজার দুর্ভিক্ষকে ইসরায়েল সরকারের কর্মকাণ্ডের সরাসরি ফলাফল বলে উল্লেখ করেছেন। ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “ইসরায়েলকে নিজেদের তৈরি দুর্ভিক্ষ অস্বীকার করা বন্ধ করতে হবে।”

আইপিসির প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব টম ফ্লেচার বলেন, “এ দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধযোগ্য ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের পরিকল্পিত অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য প্রবেশ করতে পারছে না। এ কারণেই আজকের দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে।”

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, মিসর সীমান্তে ত্রাণভর্তি হাজারো ট্রাক কয়েক মাস ধরে গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। মার্চ থেকে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সেগুলো আটকে রাখা হয়েছে। মে মাস থেকে কিছু ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও তা মোট চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

এদিকে, গাজায় চলমান হামলায় নতুন করে আরও ৭১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহের সময় নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬-এ। এর মধ্যে অন্তত এক হাজার নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশে।

গাজায় এ পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৬২২ জনে। একই সময়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২১০ শিশু–সহ অন্তত ১ হাজার ৩১ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments