Sunday, August 24, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়জুলাই সনদকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি ও অঙ্গীকারনামা বিতর্ক

জুলাই সনদকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি ও অঙ্গীকারনামা বিতর্ক

জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়া নিয়ে এখন পর্যন্ত ২৩টি রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তাদের লিখিত মতামত জমা দিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণফোরাম, বাসদ ও জাসদসহ বড় ও ছোট দল রয়েছে। তবে এখনও ৭টি দল মতামত জমা দেয়নি।

প্রধান আপত্তি উঠেছে খসড়ার দফা অঙ্গীকারনামা ঘিরে। দলগুলো লিখিত মতামতে কমিশনের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। অনেকে দাবি করেছে, সনদে যেসব দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। বেশিরভাগ দলই চাইছে সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি হোক এবং এর আলোকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আজ (রোববার) বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবে ঐকমত্য কমিশন, এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তার তারিখ নির্ধারিত হয়নি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আগস্টের মধ্যেই জুলাই সনদ চূড়ান্ত হবে না।

গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ছয়টি কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। গত ২৯ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয় প্রথম খসড়া, এরপর মতামতের ভিত্তিতে ১৬ আগস্ট পাঠানো হয় সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া।

প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছিল, নির্বাচনের পর সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকবে। বিএনপি এতে রাজি হলেও জামায়াত, এনসিপি ও কিছু দল আপত্তি জানায়। তারা সনদকে আইনি কাঠামোয় আনার দাবি তোলে। পরে ভাষায় পরিবর্তন আনা হলেও বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি এখনো নির্ধারণ হয়নি।

বিএনপির আপত্তি প্রধানত সূচনায় দেওয়া তথ্য, ভাষাগত অসংগতি এবং অঙ্গীকারনামার ২, ৩ ও ৪ নম্বর দফায়। তারা মনে করে, খসড়ায় অসত্য তথ্য রাখা হয়েছে এবং আলোচিত হয়নি এমন বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিএনপির দাবি, শুধু তাদের নয়, নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া সব দলের নাম সনদে থাকতে হবে।

জামায়াতও বলেছে, খসড়ায় সনদ বাস্তবায়নের কোনো নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া উল্লেখ নেই। এনসিপি নারী আসনে ১৫% প্রার্থী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক ধারা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে এবং অঙ্গীকারনামায় আইনি কাঠামো স্পষ্ট করার দাবি তুলেছে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, কমিশনের সংশোধিত খসড়ায় তাদের কিছু মতামত প্রতিফলিত হলেও, কিছু ধারা নিয়ে পুনর্বিবেচনার দাবি রয়ে গেছে। তিনি মনে করেন, বাস্তবায়নযোগ্য ও অ-বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবের আলাদা তালিকা তৈরি জরুরি, নইলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

এদিকে ১২ দলীয় জোটও ২৮টি বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, খসড়ায় ভাষা ও বাক্যগঠনে অস্পষ্টতা রয়েছে এবং কিছু শব্দগুচ্ছ সাধারণের বোধগম্য নয়। জোট রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নিয়ম, অভিশংসন প্রক্রিয়া, সংসদীয় বিধানসহ একাধিক বিষয়ে সংশোধনের দাবি তুলেছে।

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান আপত্তি অঙ্গীকারনামার ধারা এবং সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে। অনেকে মনে করছে, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে এর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments