বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার কারা সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
তিনি জানান, ধারণক্ষমতার বাইরে বন্দিদের সংকট মোকাবিলায় দুটি নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার এবং চারটি জেলা কারাগার চালু করা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করতে ঢাকা বিভাগকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
আইজি প্রিজন আরও বলেন, কারাগারে জনবল ঘাটতি রয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে সরকার ইতোমধ্যে ১,৮৯৯ নতুন পদ অনুমোদন করেছে এবং অতিরিক্ত ১,৫০০ জনবল চাওয়া হয়েছে। সদর দপ্তরসহ বিভাগীয় কার্যালয়গুলো পুনর্গঠন করা হয়েছে এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের পদায়ন করা হয়েছে।
দেশব্যাপী কারাগারগুলোকে এখন কারা অধিদপ্তরের নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল এটেনডেন্ট সিস্টেম ও টিম ট্র্যাকার চালু করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারে বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, মোবাইল জ্যামার, গ্রাউন্ড সুইপিং মেশিন এবং এআই-নির্ভর সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য বডি ক্যামেরা ব্যবহারের প্রচলনও করা হয়েছে।
বন্দিদের কল্যাণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাক্ষাৎ ও টেলিফোন কলের ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করা হয়েছে এবং হটলাইন সেবা (১৬১৯১) চালু করা হয়েছে। খাবারের তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, সকালের নাশতা ও বিশেষ দিবসে অতিরিক্ত খাবার যুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় মানোন্নয়নের জন্য কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা ও কাউন্সেলিং কার্যক্রম চালু আছে।
কারা অধিদপ্তরের চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্তদের কল্যাণেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত রক্ষীদের আজীবন রেশন সুবিধা অনুমোদন করা হয়েছে। কর্মরতদের শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে ওয়েট চার্ট নির্ধারণ, পিটি-প্যারেড বাধ্যতামূলক এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। গত এক বছরে বিভিন্ন স্তরের প্রায় এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। গত এক বছরে ২৯ জন কারা সদস্যকে মাদক অপরাধে জড়িত থাকার কারণে মামলা ও বিভাগীয় ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে। এজন্য ভোপ টেস্টিং মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত এক বছরে ৩৪ জনকে চাকরিচ্যুত, ৪৪০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং ১৭২ জনকে প্রশাসনিক কারণে বদলি করা হয়েছে।