গাজা পুরোপুরি দখলের ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই সংকটে পড়েছেন। এই ঘোষণা দেশজুড়ে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, যেখানে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমেছে। শুধু অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ইসরায়েলের অবস্থান সংকটাপন্ন হয়েছে; একে একে মিত্র দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এর মধ্যেই জানা গেছে, নেতানিয়াহুর গাজা দখল পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট নন সেনাপ্রধান ইয়াল জামির। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জিম্মি বিনিময় চুক্তি মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এই সেনা–সরকারের দূরত্বকে কেন্দ্র করে দেশে নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে—ইসরায়েলে কি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটতে পারে?
সেনাবাহিনীর অসন্তোষ
ইসরায়েলি সেনারা স্পষ্ট জানিয়েছে, পুরো গাজা দখল করতে দানবীয় শক্তি ও বিপুল সংখ্যক সেনা প্রয়োজন। তাদের মতে, হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করলেও কাজটি সহজ হবে না। গাজা শহর ধ্বংস হতে মাসের পর মাস সময় লাগতে পারে, এমনকি এক বছরেরও বেশি সময়। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে সেনাদের মধ্যে ক্লান্তি, ভয় ও হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই বছরের সংঘাতে শত শত সেনা প্রাণ হারিয়েছেন, আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে। মনোবল ভেঙে যাওয়ায় সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন।
সরকার ও সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব
নেতানিয়াহু নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অটল। তিনি ইতোমধ্যে ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনাকে ২ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সেনাপ্রধান ইয়াল জামির প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের বিরোধিতা করছেন এবং জিম্মি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন।
সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা
বেসামরিক সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম বলে মনে করা হচ্ছে। শক্তিশালী ‘ডিপ স্টেট’ এ ধরনের পরিস্থিতি সহজে তৈরি হতে দেবে না। সবচেয়ে সম্ভাব্য চিত্র হলো—নেতানিয়াহুকে হয়তো ক্ষমতাচ্যুত বা হত্যা করা হতে পারে এবং পরবর্তীতে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। উল্লেখযোগ্য, ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী হত্যার নজির রয়েছে।
সব মিলিয়ে, সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থান না ঘটলেও, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্ষমতার টানাপোড়েন নতুন সংকট ও অনিশ্চয়তার দরজা খুলে দিয়েছে।