গত দুই দশকে বাংলাদেশ কাঁচাপাটের বাজার হারিয়েছে ১৭টি দেশে। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি, সরকারের একাধিকবার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, ডলারের ওঠানামা ও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বাজার সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে পাট রপ্তানিকারকরা লোকসান গুনছেন এবং ব্যাংক ঋণ খেলাপির শিকার হচ্ছেন। খুলনার দৌলতপুর ও নারায়ণগঞ্জের মতো বড় মোকামে এখন মন্দাভাব বিরাজ করছে। মৌসুম শুরুর পরও জুলাই থেকে ব্যাংক রপ্তানিকারকদের নতুন ঋণ দিতে অনীহা দেখাচ্ছে।
এছাড়া স্থলবন্দরগুলোতে নানা বিধিনিষেধ থাকায় রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও এতে বিপাকে পড়েছেন। একসময় বাংলাদেশ ২৯টি দেশে কাঁচাপাট রপ্তানি করলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ১২টি দেশে।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন ও পাট অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইতালি, রাশিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ইরান, নেপাল, স্পেন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানিসহ ২৯টি দেশে পাট রপ্তানি হয়েছিল। অথচ শেষ অর্থবছরে রপ্তানি সীমিত হয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ দেশে। হারানো বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে—বেলজিয়াম, কিউবা, মিশর, এল-সালভাডোর, ইথিওপিয়া, জার্মানি, হল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, তানজানিয়া, জায়ার, রোমানিয়া ও ফিলিপাইন।
বর্তমানে যেসব দেশে পাট রপ্তানি হচ্ছে সেগুলো হলো—ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, তিউনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আইভরি কোস্ট, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র।
২০১০-২০১১ অর্থবছরে ২১ লাখ ১২ হাজার ৪০০ বেল পাট রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। অথচ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৯ বেল, যার আর্থিক মূল্য ১ হাজার ৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
গাজী জুট ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানিকারক গাজী শরিফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের পাট মানসম্মত হলেও নানান সময়ে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ২০০৯-২০১০ সালের পর একাধিকবার রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়, ফলে বিদেশি মিলগুলো বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে বাজার অনেকটা সংকুচিত হয়।
তিনি আরও জানান, আগে সড়কপথে ভারতে পাট যেত। কিন্তু এখন সমুদ্রপথে পাঠাতে হচ্ছে, এতে খরচ ও সময় দুটোই বেড়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
দৌলতপুর সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানিকারক বদরুল আলম মার্কিন বলেন, বিদেশি মিল বন্ধ হওয়ায় বাজার চাহিদা কমে গেছে। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল বাংলাদেশের পাটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ আকন্দ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগে। পরবর্তীতে সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে আরও অনেক বাজার হারাতে হয়েছে। তবে নতুন বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ব্যবসায়ীরা খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। ভারত স্থলবন্দর বাদ দিয়ে সমুদ্রপথে জাহাজে আমদানি করছে, এতে বাংলাদেশের রপ্তানি গতি কিছুটা কমে যাচ্ছে। তবে এ কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সমস্যাই বেশি হচ্ছে।