বিভিন্ন দাবিদাওয়া কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগ, বনানী, মিরপুরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করা হয়। এর ফলে নগরজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে, যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা ‘ব্লকেড অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগ মোড় দখল করেন। তাদের দাবি ছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান রোকনের ওপর হত্যার হুমকির প্রতিবাদসহ তিন দফা বাস্তবায়ন। শাহবাগ অবরোধের কারণে বাংলামটর, হাতিরপুল, কাঁটাবন, সায়েন্সল্যাব, মৎস্য ভবন ও শহীদ মিনার এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
একই দিনে সকাল থেকে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় মাসুদ অ্যাপারেলস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। এতে বনানী ছাড়াও গুলশান, মহাখালী পর্যন্ত যানজট বিস্তৃত হয়। অন্যদিকে রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের শিক্ষার্থীরা স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে সড়কে বসে থাকেন। গাবতলী থেকে আগত রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
অফিসগামী অনেকে সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি, অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। নিকটবর্তী গন্তব্যের মানুষ হেঁটে যেতে বাধ্য হন, আর দূরপাল্লার যাত্রীরা আরও অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঢাকা শহরের যানজট নিত্যসঙ্গী হলেও অবরোধ আন্দোলন পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করছে। রোদের তাপে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকা একেবারে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তাদের মতে, সামান্য ইস্যুতেই সড়ক অবরোধের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
শাহবাগে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন—
১. ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ লিখতে না দেওয়া,
২. ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি না দেওয়া,
৩. দশম গ্রেডের চাকরিতে স্নাতক প্রকৌশলীদের যোগদানের সুযোগ নিশ্চিত করা।
তাদের হুঁশিয়ারি, দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের সহসভাপতি শাকিল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সরকারকে রাত ৮টার মধ্যে সমস্যার সমাধানে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছি। নইলে আরও কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
এদিকে, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) সহকারী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানের ওপর হত্যার হুমকির ঘটনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) নিন্দা জানিয়েছে। তারা প্রকৌশলীদের মর্যাদা রক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।
আইইবির বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৌশল পেশাকে ঘিরে ষড়যন্ত্র, অস্থিরতা ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রকৌশল সমাজকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করছে। সংগঠনটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, প্রকৌশলীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।