Wednesday, August 27, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকমিয়ানমার থেকে গাজা: আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থা গণহত্যা ঠেকাতে ব্যর্থ

মিয়ানমার থেকে গাজা: আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থা গণহত্যা ঠেকাতে ব্যর্থ

আট বছর আগে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো শুরু করে। এই অভিযান ও আগুনের তাণ্ডবের ফলে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা নিজ ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়। ‘সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ নামে পরিচালিত এই অভিযানে তিন শতাধিক গ্রাম ধ্বংস করা হয়। তখন দেশের বেসামরিক সরকার অং সাং সুচির নেতৃত্বে ছিল, যিনি এই হত্যাযজ্ঞকে অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে এর সাফাই গাইতেন।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। তাদের ফিরে যাওয়ার কোনো ভরসাও নেই। ফিলিস্তিনের জনগণও অনুরূপ পরিস্থিতির শিকার। এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে, শক্তিশালী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এ ধরনের গণহত্যা প্রতিরোধে কার্যকরভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) অপরাধী রাষ্ট্রগুলোকে বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যর্থ। মিয়ানমারের ক্ষেত্রে এটি একধরনের দায়মুক্তি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

ইসরায়েলের ফাঁস হওয়া সামরিক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত আরবান ওয়ারফেয়ারের ফলে ৮৩ শতাংশ নিহত বেসামরিক নাগরিক। একইভাবে মিয়ানমারে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চলছে। ২০২০ সালে আইসিজে নিশ্চিত করেছিল যে, মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রিত জনগণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এরপরও মিয়ানমারে দায়মুক্তি এবং সহিংসতা বেড়েছে।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর সুচি ও তার নির্বাচিত সরকার উৎখাত হয়। এরপর থেকে সামরিক জান্তা ও নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী, যেমন আরাকান আর্মি, রোহিঙ্গা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এর প্রমাণ রয়েছে। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ ও ইসলামবিদ্বেষের কারণে আরাকান আর্মি এই নিপীড়ন চালাচ্ছে।

সাধারণ জনগণ প্রধানত সামরিক শক্তিকেই দোষী মনে করলেও, গণহত্যার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তেমন চাপ নেই। রাজনৈতিক দল, বৌদ্ধ সংগঠন ও সুশীল সমাজের কিছু অংশ এই নিপীড়নে অংশীদার, তবে তাদের দায়ের আওতায় আনা হচ্ছে না।

২০১৪ সালে আমরা একটি তিন বছরের গবেষণা প্রকাশ করি, যেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিত বিতাড়ন, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। আমরা এটিকে ‘নীরব গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করি—রাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত ধ্বংসযজ্ঞ, যেখানে সহিংসতা ও আন্তর্জাতিক আইনকে গণহত্যার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অং সাং সুচি একসময় পশ্চিমাদের চোখে গণতন্ত্রের প্রতীক ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজ দেশে পরিচালিত গণহত্যার সাফাই দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মির ৬০০ রোহিঙ্গা হত্যা এ বিষয়টির প্রমাণ। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দায়মুক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের উদাসীনতার কারণে গণহত্যার প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।

পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলো এখন মানবতার রক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন করে এবং আন্তর্জাতিক বিচারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যারা ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোরও একই আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। ফলে, আন্তর্জাতিক মানবিক মূল্যবোধ ও গণহত্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার সাক্ষী হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments