গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং হামাসের হাতে আটক থাকা বাকি জিম্মিদের দ্রুত মুক্তি দাবিতে ইসরায়েলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের মতো বৃহৎ কর্মসূচি চলে। জিম্মিদের স্বজনদের সংগঠন হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরামের ডাকে এদিন হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়।
সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরেই সরকারকে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতভর বিক্ষোভ চলেছিল। মঙ্গলবার সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন যেন তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তিতে ভূমিকা রাখেন।
টাইমস অব ইসরায়েল ও জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের কাছে এখনও ২০ জন জিম্মি জীবিত আছেন। বিক্ষোভের কারণে ইসরায়েলের প্রধান সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, মহাসড়কগুলিতে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। তেলআবিবের উত্তরে ইয়াকুম জংশনের কাছে কোস্টাল মহাসড়কে বিক্ষোভকারীরা আগুন জ্বালানোর ফলে সড়ক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া আয়ালন মহাসড়কও অবরোধ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার সাংবাদিকদের সামনে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “৬৯০ দিন ধরে সরকার কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছাড়া যুদ্ধ চালাচ্ছে। জনগণের চাপ নেতানিয়াহুকে সবচেয়ে বেশি ভয় দেখাচ্ছে। আমরা এই যুদ্ধ আরও আগে শেষ করতে পারতাম এবং জিম্মি ও সেনাদের ফিরিয়ে আনতে পারতাম, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সাধারণ মানুষকে বলি দিয়েছে।”
এদিকে, ইসরায়েলের সেনাপ্রধান ইয়াল জামির জানিয়েছেন, গাজার বাকি জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য আলোচনা চলছে। তবে যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় নতুন ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চলছে। গতকাল ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; তাদের মধ্যে ১৭ জন ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারান। দক্ষিণ গাজার এক হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক ও চারজন স্বাস্থ্যকর্মী। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ তদন্ত দাবি করেছে, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অবরোধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে গতকাল আরও তিন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। অনাহারজনিত কারণে এ পর্যন্ত মোট ৩০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১১৭ জন শিশু।