Wednesday, August 27, 2025
spot_imgspot_img
Homeসর্বশেষগুম-ফেরতদের অভিযোগ: জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ে পুলিশের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটদের যোগসাজশ

গুম-ফেরতদের অভিযোগ: জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ে পুলিশের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটদের যোগসাজশ

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে গুম থেকে ফিরে আসা দুই শতাধিক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেছেন যে, তাদের জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ে শুধু পুলিশই নয়, ম্যাজিস্ট্রেটরাও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। অধিকাংশ ভুক্তভোগী জানান, গুমকালীন নির্যাতনের পর পুলিশ তাদের লেখা স্বীকারোক্তি হুবহু পড়িয়ে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল।

গুমফেরতদের সংগঠন ভয়েস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ার্ড পারসন্স (ভয়েড) এই অভিযোগপত্র তৈরি করেছে। ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই গুম-সংক্রান্ত কমিশনে পৃথকভাবে অভিযোগ জমা দিয়েছেন, কেউ কেউ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাও করেছেন। অনেকে সেই মামলায় খালাস পেয়েছেন বা খালাস পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, স্বীকারোক্তি আদায় কেবল পুলিশের দায়িত্ব ছিল না; অনেক ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটরাও পুলিশের সাজানো বক্তব্য বৈধতা দেওয়ার মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন। নারী শিক্ষার্থী, দিনমজুর ও ব্যবসায়ীরাও তাদের গুম এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ভয়েডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী মাসরুর আনোয়ার চৌধুরী বলেন, “শেখ হাসিনার শাসনামলে স্বীকারোক্তি আদায় প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকা বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারার আলোকে হোলি আর্টিজান হামলার আসামি হাদিসুর রহমানের অভিজ্ঞতা দেখায়, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুলিশ তাকে হাতে-পাতা ও চোখ-মুখ বেঁধে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল। তিনি বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমাকে স্বাক্ষর করাতে হবে, না হলে আরও বেশি মারবেন।”

অন্যান্য মামলাতেও গুমফেরতরা অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট যৌথভাবে স্বীকারোক্তি আদায়ে কাজ করেছেন। যেমন ২০১৭ সালের ১০ মে নাচোল থেকে আটক সবুর খানের বিরুদ্ধে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের যৌথ নির্যাতনের বর্ণনা রয়েছে। শিক্ষার্থী ইমরান হুসাইন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও লুকমান মিয়ার অভিজ্ঞতাও একই প্রমাণ দেয়। তারা জানান, স্বীকারোক্তি নেওয়ার সময় শারীরিক নির্যাতন, হুমকি এবং পুলিশি চাপের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটদের উদাসীনতা বা সহায়তা থাকত।

জেএমবি-সংশ্লিষ্টতার মামলায় বন্দি শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশি নাটক ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ে নারীরা পর্যন্ত স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছেন। একইভাবে, ধানমন্ডি ও খুলনার কিছু মামলায় পুলিশের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটরাও স্বীকারোক্তি আদায়ে সহযোগিতা করেছেন।

ফৌজদারি কার্যবিধি ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধান স্পষ্টভাবে বলে, আসামি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেবেন, তা পড়তে ও বুঝতে পারবেন, এবং স্বাক্ষর আগে নিশ্চিত হতে হবে। কিন্তু একাধিক মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটরা আসামিদের নিজেরাই পুলিশি খসড়া অনুযায়ী স্বীকারোক্তি লিখতে বাধ্য করেছেন। সাবেক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও অ্যাডভোকেট শেখ ওমর বলেন, “শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচার বিভাগসহ সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কার্যত নিস্ক্রিয় ছিল। স্বীকারোক্তি আদায়ে বিশেষ বিধানও মানা হয়নি।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments