মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে রপ্তানিকৃত সব পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা আজ (২৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হয়েছে। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীকে উৎপাদন ও ভোগ বাড়ানোর আহ্বান জানালেও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বাস্তবায়ন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ তথ্য জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লায় দেওয়া ভাষণে মোদি আত্মনির্ভরতার ডাক দেন। তিনি ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের দোকানের সামনে ‘স্বদেশি’ বা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ সাইনবোর্ড টানানোর অনুরোধ করেন। তার মতে, “আত্মনির্ভর হতে হবে হতাশা থেকে নয়, গর্ব থেকে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা বাড়ছে, তাই আমাদের নিজেদের শক্তিতেই টিকে থাকতে হবে।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ভারতের পোশাক, হীরা, চিংড়িসহ বহু রপ্তানিনির্ভর খাতকে সরাসরি আঘাত করছে। বিশ্লেষকদের মতে, মোদির বার্তা আসলে ট্রাম্পের শুল্কনীতিরই জবাব—“ভারতে তৈরি করো, ভারতে খরচ করো।”
কিন্তু বাস্তবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এখনো প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। বিভিন্ন ভর্তুকি ও প্রণোদনা সত্ত্বেও ভারতের জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অবদান ১৫ শতাংশেই আটকে আছে। এজন্য এবার কর ব্যবস্থার সংস্কারের দিকে ঝুঁকেছেন মোদি। আয়করে ১২ বিলিয়ন ডলারের ছাড় দেওয়ার পর এবার লক্ষ্য জিএসটি সরলীকরণ ও হ্রাস।
আট বছর আগে জিএসটি চালুর উদ্দেশ্য ছিল জটিল করব্যবস্থা সহজ করা, কিন্তু নানা স্তর ও ছাড়ের কারণে এটি আরও জটিল হয়েছে। মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শিগগিরই দুই স্তরের সহজ জিএসটি চালু করবেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, আয়কর ও জিএসটি ছাড় মিলিয়ে ভোক্তা খাতে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের প্রবাহ সৃষ্টি হবে।
ভারতের অর্থনীতির প্রধান ভরসা ভোক্তা ব্যয়, যা মোট জিডিপির প্রায় ৬০ শতাংশ। গ্রামীণ চাহিদা ভালো ফসলের কারণে স্থিতিশীল থাকলেও শহরে চাকরি কমা ও মজুরি হ্রাসের ফলে খরচ কমেছে। কর ছাড় এতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মরগান স্ট্যানলির মতে, এ পদক্ষেপ প্রবৃদ্ধি বাড়াবে, মুদ্রাস্ফীতি কমাবে এবং মোটরসাইকেল, ছোট গাড়ি, পোশাক, সিমেন্টের মতো খাতগুলো সরাসরি উপকৃত হবে।
শেয়ারবাজার ইতোমধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। একই সঙ্গে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ১৮ বছর পর ভারতের ঋণমান উন্নীত করেছে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগ ও সরকারের ঋণখরচ কমাতে সহায়তা করবে।
তবে সব সংস্কারের পরও ভারতের প্রবৃদ্ধি পূর্বের ৮ শতাংশ হার থেকে অনেক কমে গেছে। রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কও সংকটে পড়েছে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির সঙ্গে বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে— যা কয়েক মাস আগেও কল্পনার বাইরে ছিল।