দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ হ্রাস পেলেও মাছের বাড়তি চাহিদা মেটাতে চাষ অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম অগ্রণী জেলা বগুড়া। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার টন মাছ উদ্বৃত্ত থাকে, যা সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। গত তিন বছরে এখানে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১২০০ মেট্রিক টন।
তবে উৎপাদন বৃদ্ধির সাফল্য পেলেও চাষিরা সন্তুষ্ট নন। তাদের অভিযোগ, মাছের খাবারসহ উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট সব উপকরণের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় মাছের দাম বাড়েনি। এছাড়া এখনো বগুড়ায় মাছের খাদ্যে ভেজাল পরীক্ষার জন্য কোনো ল্যাব না থাকায় বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছেন চাষিরা।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, বগুড়ার ১২টি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার ১৬০টি পুকুর ও দিঘি রয়েছে। এছাড়া ১৫টি নদী, ৮১টি বিল, সরকারি ২টি খামার, ১২৪টি বেসরকারি হ্যাচারি এবং আরও ৩৬১টি হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত পোনা মাছ দিয়ে জেলার চাহিদা পূরণ ও অতিরিক্ত সরবরাহ করা হয়।
২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে জেলার জনসংখ্যা ৩৭ লাখ ৩৪ হাজার। তাদের জন্য প্রতিবছর মাছের প্রয়োজন প্রায় ৮৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। কিন্তু বাস্তবে উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ৪ হাজার থেকে ১ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১৯ হাজার টন মাছ উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।
গত তিন অর্থবছরে উৎপাদনের হিসাব দাঁড়িয়েছে—
- ২০২২-২৩ সালে: ১ লাখ ৪ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন
- ২০২৩-২৪ সালে: ১ লাখ ৪ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন
- ২০২৪-২৫ সালে: ১ লাখ ৫ হাজার ৩৫১ মেট্রিক টন।
চাষিরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘ ২০ বছরে খাদ্য, খৈল, চুন, রাইস পোলিশ, এমনকি বিদ্যুতের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু পাঙাশ মাছসহ অন্যান্য মাছ আগের দামের কাছাকাছিই বিক্রি করতে হচ্ছে। উপরন্তু ভেজাল খাদ্যের কারণে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। ব্যাংক ঋণ শোধ করতে না পেরে অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ফলে দ্রুত বগুড়ায় একটি খাদ্য পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের দাবি তুলেছেন তারা।
অন্যদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, উৎপাদন বৃদ্ধিতে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ বড় ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়াতে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।