যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্প্রতি গড়ে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতেই একই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজ উপজেলায় বিদ্যমান স্টেডিয়ামের পাশাপাশি আরেকটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব করেছেন। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এটি জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রচারণার অংশ হতে পারে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি), যার চেয়ারম্যানও আসিফ মাহমুদ, কুমিল্লার মুরাদনগর, নোয়াখালীর সেনবাগ ও মাগুরা জেলা স্টেডিয়ামে উন্নয়নকাজের প্রস্তাব দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে পিইসি সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৯ সালে ‘উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ—প্রথম পর্যায়’ প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামঘর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে একটি স্টেডিয়াম ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। তবুও নতুন প্রস্তাব এসেছে উপজেলার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আরেকটি স্টেডিয়াম তৈরির জন্য। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন। স্থানীয়রা বলছেন, মাঠের আকার ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রস্তাবটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, “মুরাদনগরে নতুন স্টেডিয়াম উন্নয়ন, সেনবাগে পুরোনো স্টেডিয়াম সংস্কার এবং মাগুরা জেলা স্টেডিয়ামে ডরমিটরি ভবন নির্মাণ” প্রকল্পটি প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়েছে।
যেহেতু প্রকল্পের ব্যয় ৫০ কোটির কম, তাই এটি মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পর্যায়ে অনুমোদনযোগ্য। মোট ব্যয়ের প্রায় ৬৪ শতাংশ ভবন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় হবে, যার পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
তবে স্থানীয়ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, উপদেষ্টার বাবার বিদ্যালয়ের মাঠেই কেন নতুন স্টেডিয়ামের প্রস্তাব করা হলো। মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় ও ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার কারণে একটি স্টেডিয়াম যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, উপজেলা থেকে আসা আবেদন তিনি শুধু ফরোয়ার্ড করেছেন, সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে নোয়াখালী সেনবাগের পুরোনো স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে মাগুরা স্টেডিয়ামে খেলোয়াড়দের আবাসনের জন্য ডরমিটরি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একনেক সভায় উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতিটি স্টেডিয়ামের ব্যয় ১৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা মূল প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশি। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রকল্পটি তড়িঘড়ি করে অনুমোদন করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ১২৫টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছিল, যেখানে প্রতিটির জন্য গড়ে খরচ হয়েছিল মাত্র ৫৩ লাখ টাকা।