মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের টেক্সটাইল, চামড়া, মূল্যবান পাথর ও রাসায়নিক শিল্পের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে বড় আঘাত হেনেছে। তবে এ সংকটে ভীত না হয়ে বরং দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই পরিস্থিতিকে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন এবং সাধারণ মানুষ থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পর্যন্ত সবাইকে দেশীয় পণ্যের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মোদি বলেছেন, “এই ব্যাপক শুল্ক আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। দীপাবলির আগে লাখো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের জন্য এটি নতুন প্রেরণা হয়ে এসেছে।” শুল্কের চাপ থেকে জনগণকে আংশিক স্বস্তি দিতে সরকার কর কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি মোদি বারবার দেশীয় পণ্য ব্যবহার ও ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ প্রচার চালানোর ডাক দিয়েছেন। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে তিনি দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশি পণ্যের প্রতি উৎসাহিত করতে ‘স্বদেশি’ সাইনবোর্ড ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তার ভাষায়, “আমরা বাধ্য হয়ে নয়, আত্মসম্মানের কারণে স্বনির্ভর হব। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বার্থপরতার এই সময়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।”
রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। আগের শুল্ক মিলিয়ে তা দাঁড়িয়েছে মোট ৫০ শতাংশে, যা ২৬ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ভারত এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্কের ভার বহন করছে। অথচ আমেরিকাই ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম ও এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
এই বাড়তি শুল্কে ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলো—পোশাক, হীরা, চিংড়ি থেকে শুরু করে নানা খাতের কোটি মানুষের জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বনির্ভরতার ডাক দিয়ে মোদি আসলে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জবাব দিয়েছেন। তার মূল বার্তা ভারতীয়দের জন্য স্পষ্ট—দেশে উৎপাদন করুন এবং দেশেই ভোগ করুন।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, রুপির দরপতন, শেয়ারবাজারের অস্থিরতা এবং রপ্তানি খাতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষতির আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় সরকার বহুমুখী কৌশল হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ, কর ছাড়, রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা এবং বিকল্প বাজার খোঁজা।