চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষের সময় এক শিক্ষার্থীকে ধানক্ষেতে নিয়ে ধারালো রামদা দিয়ে কোপানো ও লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাতের ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় মিলেছে। হামলাকারীদের মধ্যে একজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উত্তর জেলা শাখার নেতা, আরেকজন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, রবিবার দুপুরে জোবরা গ্রামে চার-পাঁচজন মিলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ধানক্ষেতে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে দুজনের হাতে ছিল রামদা, আর দুজন শক্ত লাঠি। এক পর্যায়ে একজন রামদা দিয়ে কোপানোর পর আরেকজন লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। হামলাকারী ওই ব্যক্তি হলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল মাহমুদ ত্রিশাদ, যিনি ১১ নম্বর পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আহ্বায়ক এবং রাউজানের এমপি ফজলে করিম চৌধুরীর অনুসারী। ঘটনার পর যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভ করে দেন।
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতাকেও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য স্থানীয়দের উসকে দিতে দেখা গেছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে আহ্বান জানান, “প্রিয় জোবরাবাসী, নিজের সম্মান রক্ষা করো, দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ শক্তি দেখাও।”
স্থানীয় সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারা কেবল গ্রামবাসীকে উস্কানি দেননি, নিজেরাও হামলায় অংশ নেন। শনাক্ত হওয়া হামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় এক সিএনজি চালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিশয় দীপঙ্কর হলের দারোয়ান বাসাক।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, স্থানীয়রা ছাদে উঠে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন এবং কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। এতে গুরুতর আহত হন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, গ্রামবাসী ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। দা দিয়ে কোপানো, ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার মতো নৃশংসতা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শবনম জানান, আমাদের দিকে একযোগে ইট ছোড়া হয়। মাথায় আঘাত পেয়ে আমি কিছু দেখতে পাইনি, পরে সহপাঠীরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র রাসেল বলেন, ক্যাম্পাস ও জোবরায় যৌথবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। তবে সোমবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।