নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর জাহিলিয়াতের অন্ধকার দূর করে মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আগমন করেছিলেন। তাঁর বংশ, চরিত্র ও অবয়ব সবদিক থেকেই তিনি মানব ইতিহাসের সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন।
সহিহ মুসলিম শরিফে বর্ণিত একটি হাদিসে নবীজী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ইবরাহিমের সন্তানদের মধ্যে ইসমাইলকে বেছে নিয়েছেন, ইসমাইলের বংশ থেকে কিনানাকে, কিনানার মধ্যে কুরাইশকে, কুরাইশের মধ্যে বনু হাশিমকে, এবং বনু হাশিম থেকে আমাকে। এটি প্রমাণ করে যে, নবুয়তের জন্য নবীজী (সা.)-এর বংশ আল্লাহ কর্তৃক বিশেষভাবে নির্বাচিত ছিল।
ইমাম বুখারী (রহ.) নবী করিম (সা.)-এর পূর্ণ বংশধারা এভাবে উল্লেখ করেছেন:
আবুল কাসিম মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদু মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কা’ব ইবনে লুয়ি ইবনে গালিব ইবনে ফিহর ইবনে মালিক ইবনে নাযর ইবনে কিনানা ইবনে খুযাইমা ইবনে মুদরিকা ইবনে ইলিয়াস ইবনে মুযার ইবনে নিযার ইবনে মাদ ইবনে আদনান।
সব ইতিহাসবিদ একমত যে, আদনান নবী ইসমাইল (আ.)-এর বংশধারী ছিলেন। তবে আদনান থেকে ইসমাইল (আ.) পর্যন্ত কত প্রজন্ম ও কারা ছিলেন তা নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে।
নবীজী (সা.) নিজেই বলেছেন, তিনি হলেন তার পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া এবং ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদের ফল।
মহানবী (সা.)-এর মা, আমিনা বিনতে ওহাব, গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে তাঁর দেহ থেকে এমন এক আলো বের হচ্ছে, যা সিরিয়ার প্রাসাদগুলো আলোকিত করছে। এটি নবীজীর মহান দায়িত্ব ও পবিত্র উৎসের ইঙ্গিত বহন করে, যা ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর সঙ্গে যুক্ত।
নবীজী (সা.) কুরাইশ গোত্রের সম্মানিত পরিবার বনু হাশিম থেকে আগমন করেছিলেন, যা একটি ঐশী পরিকল্পনার অংশ ছিল। এ উচ্চ বংশ সমাজে গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব বৃদ্ধি করেছিল। তবে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী আসল মর্যাদা আসে তাকওয়া ও নেক আমলের মাধ্যমে, কেবল বংশ বা পরিচয়ের দ্বারা নয়।
নবীজীর পিতা আবদুল্লাহ ও মাতা আমিনা বিয়ের পর কিছুদিনের মধ্যেই আবদুল্লাহ সিরিয়ার বাণিজ্য সফরে গিয়ে মারা যান। তখন আমিনা গর্ভবতী ছিলেন।
নবী মুহাম্মদ (সা.) রবিউল আউয়াল মাসে ইয়ামুল ইসনাইন (সোমবার), আমুল ফিল সালে (হাতির বছর) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকার মতো নতুন মোড় হিসেবে চিহ্নিত। ইবন কাসীর উল্লেখ করেন, জন্মের সময় আমিনার দেখা আলো সিরিয়ার প্রাসাদগুলো আলোকিত করেছিল, যা ভবিষ্যতে ইসলাম বিস্তারের ইঙ্গিত বহন করে।