Wednesday, September 3, 2025
spot_imgspot_img
Homeসর্বশেষবাংলাদেশে ভারতপন্থিদের পাঁচ ধারা ও তাদের প্রভাব

বাংলাদেশে ভারতপন্থিদের পাঁচ ধারা ও তাদের প্রভাব

আমাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্র বিশ্বে ভারত, হিন্দুস্থান ও ইন্ডিয়া নামে পরিচিত। আলোচনার শুরুতেই ‘ভারত’ নামটির উৎপত্তি সংক্ষেপে জানা জরুরি। আর্যদের উপমহাদেশে আগমনের সঙ্গে ‘ভারত’ শব্দটির সম্পর্ক রয়েছে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদে একাধিকবার ‘ভারত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হিন্দু পুরাণে কখনো আর্য গোষ্ঠী, কখনো বা কোনো কিংবদন্তির শাসককে ‘ভারত’ বলা হয়েছে। মহাভারত অনুসারে দুষ্মন্তের ছেলে ভারত থেকেই ভারতবর্ষ নামের প্রচলন ঘটে। এই পৌরাণিক বর্ণনা থেকেই ‘ভারত’ নামের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য বোঝা যায়। আর এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ভারতপন্থিদের আমি পাঁচ ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করেছি।

১. অখণ্ড ভারতপন্থি

এই গোষ্ঠী বিশ্বাস করে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগ একটি ঐতিহাসিক ভুল ছিল। তারা মনে করে, যদি ভারত একীভূত থাকত তবে আজ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াত, আর বাংলাদেশও তার অংশ হতো। এদের মধ্যে সাধারণত ধর্মীয় অনুভূতি কম থাকে, বরং তারা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। আওয়ামী লীগ, বামপন্থি দল ও সুশীল সমাজে এই ধরনের লোক পাওয়া যায়।

২. ধর্মীয় ভারতপন্থি

ভারতের সঙ্গে হিন্দু ধর্মের যোগসূত্র থাকায় বাঙালি হিন্দুদের বড় অংশ নিজেদের ধর্মীয়ভাবে ভারত-সংলগ্ন মনে করে। ইতিহাসে আর্যরা পূর্বাঞ্চলীয় জনগণকে অবজ্ঞা করলেও পরবর্তী কালে বাঙালি হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা অখণ্ড ভারত চেতনার সঙ্গে নিজেদের একীভূত করেছেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতা থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালে বাংলাকে ভাগ করার দাবিতেও এই মানসিকতা কাজ করেছে। আজও ইসকনের মতো কিছু সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার স্বপ্ন দেখেন।

৩. সাংস্কৃতিক ভারতপন্থি

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন ভারতীয় প্রভাবের অধীনে চলে গেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ, নাটক ও চলচ্চিত্রে মুসলিম চরিত্রকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন, হিন্দু চরিত্রকে ইতিবাচকভাবে দেখানো—এসবই এর উদাহরণ। ভারতীয় টেলিভিশনের ধারাবাহিকে ধর্মীয় রীতিনীতিকে মহিমান্বিত করা হলেও বাংলাদেশে ইসলাম পালনকে প্রায়শই কূপমণ্ডূকতা হিসেবে দেখানো হয়। সাংস্কৃতিক ভারতপন্থিরাই রাজনৈতিক ভারতপন্থাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে আসছে।

৪. দাসানুদাস ভারতপন্থি

এই গোষ্ঠী ভারতের সঙ্গে একেবারেই প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক বজায় রাখে। আওয়ামী লীগ ও বামপন্থি দলগুলো এদের মধ্যে প্রধান। পাকিস্তান আমল থেকেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষী বাহিনী গঠন থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার দিল্লিনির্ভর রাজনীতি—সবই এই ধারার অংশ। জাতীয় পার্টির মতো দলও কখনো কখনো একই ধারা অনুসরণ করেছে। এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

৫. হীনম্মন্য ভারতপন্থি

এই শ্রেণি বিশ্বাস করে, ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিবেশীকে সন্তুষ্ট না রেখে বাংলাদেশ এগোতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আজ বাংলাদেশ রাজনৈতিক, সামরিক বা অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের ওপর একতরফাভাবে নির্ভরশীল নয়। বরং ভারতই বাংলাদেশের বাজার ও শ্রমশক্তির কারণে উপকৃত হয়। তবুও অনেক রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও টকশো ব্যক্তিত্ব ভারতের ছায়াতেই নিরাপত্তা খোঁজেন। এটি মূলত মানসিক হীনম্মন্যতার বহিঃপ্রকাশ।

উপসংহার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে এই পাঁচ ধরনের ভারতপন্থিদের মোকাবিলা করা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোতে বিশেষ করে ‘দাসানুদাস’ ও ‘হীনম্মন্য’ ভারতপন্থার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ভারতের অনুমোদন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না—এই ভুল ধারণাই অনেককে পরিচালিত করে। অথচ বাংলাদেশের স্বকীয়তা রক্ষায় এ প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা অপরিহার্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments