Thursday, September 4, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় একদিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭৩ ফিলিস্তিনি, মানবিক সংকট তীব্র

গাজায় একদিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭৩ ফিলিস্তিনি, মানবিক সংকট তীব্র

ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একদিনে অন্তত ৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। হামাসের দাবি, ইসরায়েল পুরো পরিবারকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে হত্যা চালাচ্ছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় তীব্র হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনারা। এতে নিহত হন অন্তত ৭৩ জন ফিলিস্তিনি। হামাস জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে এবং এই পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সাবরিন আল-মাবহুহ আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, “আমার ভাইকে তার ঘরেই হত্যা করা হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানসহ পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কেউ বেঁচে নেই।”

শেখ রাদওয়ান এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষরাও হামলার শিকার হন। একটি স্কুলের তাঁবুতে গ্রেনেড হামলার কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা জাকিয়া সামি বলেন, “শেখ রাদওয়ান জ্বলছে। যদি গাজা সিটিতে আগ্রাসন বন্ধ না হয়, আমরা সবাই মরব। যারা শুধু দেখছে, কিছু করছে না—তাদের ক্ষমা করা হবে না।”

গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, গত তিন সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত ১০০ বার রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, যা পুরো আবাসিক ব্লক ও মহল্লা ধ্বংস করেছে। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজা সিটিতে মারা গেছেন প্রায় ১,১০০ মানুষ।

উত্তর গাজার আল-জারিসি পরিবারের বাড়িতে একই দিনে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। হামাস এটিকে ‘ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং দাবি করেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের জীবন ধ্বংসের পরিকল্পিত অংশ।

মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশ বন্ধ থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক শিশুসহ ছয়জন অনাহারে মারা গেছেন। চলমান অবরোধকালে ক্ষুধাজনিত কারণে এখন পর্যন্ত ৩৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৩১ শিশু।

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের অভিযানে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। শুধুমাত্র ১৪ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে জোরপূর্বক নতুন করে ৮২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩০ হাজারকে উত্তর থেকে দক্ষিণে সরানো হয়েছে।

শিশুদের অবস্থাও ভয়াবহ। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাঁচ বছরের নিচের ১,৩২,০০০ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বেন। বর্তমানে ৩,২০,০০০ শিশু মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছেন। ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, “দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের জন্য এখনই জরুরি মানবিক সহায়তা ও বিশেষ পুষ্টি সরবরাহ প্রয়োজন।”

খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি আগস্টেই নিশ্চিত করেছে, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং তা দ্রুত দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে। সহায়তাকর্মীদের মতে, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে প্রতিদিন বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য এক ভয়াবহ সংগ্রাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments