Thursday, September 4, 2025
spot_imgspot_img
Homeসর্বশেষচলনবিলের প্রত্যন্ত পংখারুয়া গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

চলনবিলের প্রত্যন্ত পংখারুয়া গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত পংখারুয়া গ্রামে অবস্থিত পংখারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলনবিল অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বর্ষার সময় চারপাশে জলরাশি ও নৌকা ছাড়া অন্য কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ও স্বপ্নের সোপান হিসেবে কাজ করছে।

১৯৬৮ সালে আলহাজ ময়ান উদ্দিনের দানকৃত জমিতে একটি ছনের ঘরে যাত্রা শুরু হয় বিদ্যালয়ের। প্রথম দিকে শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র ভর্তি করতেন। বর্ষায় শিক্ষার্থীরা ডিঙি নৌকা, কলার ভেলা বা স্টিলের পাতিল ভাসিয়ে স্কুলে আসত। সেই অক্লান্ত প্রচেষ্টা আজ বিদ্যালয়টিকে আধুনিক শিক্ষার মডেল হিসেবে রূপ দিয়েছে।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, আইসিটি ব্যবহার, সততা স্টোর, নিয়মিত সমাবেশ, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, বার্ষিক বনভোজন ও স্কাউটিংসহ নানা কার্যক্রম চলছে। বিদ্যালয়ের সুন্দর পরিবেশ ও শৃঙ্খলা দেখে মনে হয় এটি শতভাগ আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুসনেয়ারা খাতুন বলেন, “মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে আমরা চিত্র, কবিতা ও গল্পের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারছি। তবে শিক্ষক সংকট এখনও রয়েছে, তা সমাধান হলে আরও ভালো হবে।” অন্য শিক্ষার্থী বলেন, “স্কুলে আসার পথে নানা অসুবিধা হয়। বর্ষায় রাস্তা পার হতে পারি না, স্কুল ড্রেস ময়লা হয়ে যায়। রাস্তা ভালো হলে সুবিধা হতো।”

সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “মাল্টিমিডিয়া পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে। তারা খেলার মাধ্যমে শেখার সুযোগ পাচ্ছে, তাই চাপ মনে হচ্ছে না।”

উল্লাপাড়ার অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের মান দেখতে আসেন। হেমন্তবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, “প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য এই মান, পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা অসাধারণ। শিক্ষক না থাকলেও শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলাবদ্ধ।” বনবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা খাতুন বলেন, “শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে অ্যাসেম্বলি করছে, শ্রেণিকক্ষে শৃঙ্খলা বজায় রাখছে। এটি অনুকরণীয়।”

প্রধান শিক্ষক কে. এম. রহমতুল বারী জানান, “প্রথমে শিক্ষার্থী মাত্র ৫০ জন ছিল, এখন সংখ্যাও বেড়েছে। যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষক সংকট দ্রুত সমাধান জরুরি।” উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছানোয়ার হোসেন বলেন, “রাস্তা সংস্কার করা হবে। বিদ্যালয়ের ভালো অবস্থান অন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্যও মডেল হবে।”

বর্তমানে মাত্র ৪ জন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার মান তুলনামূলক ভালো থাকার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধান শিক্ষক জেলার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে চলনবিলের বিলের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা পংখারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের স্বপ্নপূরণের ও আলোকিত ভবিষ্যতের প্রতীক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments