সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ফিলিস্তিন ইস্যুতে সরাসরি ইসরায়েলকে সতর্ক করে জানিয়েছে, পশ্চিম তীর দখলের কোনো পদক্ষেপ “রেড লাইন” অতিক্রম করবে এবং আব্রাহাম চুক্তির মূল চেতনা ধ্বংস করবে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক লানা নুসাইবেহ বলেছেন, পশ্চিম তীর দখল শুধু দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সমন্বয়কেও অচল করে দেবে। এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েল সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সম্প্রতি ইসরায়েলের উগ্রডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরে চার-পঞ্চমাংশ দখলের প্রস্তাব প্রকাশ করার পর আমিরাতের এই সতর্কবার্তা এসেছে।
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৬০টি বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে প্রায় সাত লাখ ইহুদি বসবাস করছেন। একই এলাকায় রয়েছে প্রায় ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি। আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে এসব বসতি অবৈধ।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। শর্ত ছিল, ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা স্থগিত রাখবে। যদিও ইসরায়েলের বর্তমান মন্ত্রিসভায় অনেক সদস্য দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম তীর দখলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
লানা নুসাইবেহ বলেন, “আমরা শুরু থেকেই আব্রাহাম চুক্তিকে ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের ন্যায্য আকাঙ্ক্ষা পূরণের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছি। পশ্চিম তীর দখল আমাদের কাছে রেড লাইন। এটি শুধু চুক্তির চেতনা ধ্বংস করবে না, বরং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি আন্তর্জাতিক ঐকমত্যও ভেঙে দেবে।”
অন্যদিকে, জেরুজালেমে স্মোট্রিচ বলেন, “এখন সময় এসেছে দখলের। দেশ ভাগ করে মধ্যভাগে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র গড়ার ধারণা বাতিল করতে হবে।” তিনি একটি মানচিত্রও প্রদর্শন করেন, যেখানে পশ্চিম তীরের প্রায় ৮২ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব বিস্তারের পরিকল্পনা দেখানো হয়েছে। বাকি ১৮ শতাংশ এলাকা সীমিত রাখা হয়েছে ছয়টি ফিলিস্তিনি শহরের আশপাশে—জেনিন, তুলকারেম, নাবলুস, রামাল্লাহ, জেরিহো ও হেবরন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এই পরিকল্পনা তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নের ওপর সরাসরি হুমকি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও অভিযোগ করেছে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ইতিমধ্যে একধরনের বর্ণবাদী ব্যবস্থা চালু করেছে, যদিও ইসরায়েলি সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে পশ্চিম তীর কার্যত পূর্ব জেরুজালেম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে।