বাংলার গর্ব এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ জাতীয় মাছ ইলিশ আজ সাধারণ মানুষের কাছে দূরস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস বন্দর পাথরঘাটায় ইলিশ থাকলেও ৯৫ শতাংশ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত, এই মাছ কিনতে পারছে না।
বর্তমানে বাজারে এক কেজি ইলিশের দাম ২৫০০ টাকার ওপরে পৌঁছেছে, যা দুই মনের ধানের সমমূল্য। অর্থাৎ, এক কেজি ইলিশ কিনতে একজন কৃষককে দুই মনের ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। এই উচ্চমূল্য সাধারণ দিনমজুর বা ক্ষুদ্র কৃষকের পক্ষে বহনযোগ্য নয়, ফলে ইলিশ এখন মূলত ধনী মানুষের খাবার, আর গ্রামের মানুষদের কাছে এটি ‘স্বপ্নের মাছ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাথরঘাটার স্থানীয় কৃষক আবদুর জব্বার বলেন, “মাঠে কঠোর পরিশ্রম করি, কিন্তু ইলিশ কিনে খাওয়া আমাদের জন্য অসম্ভব। দুই হাজার পাঁচশত টাকায় একটি মাছ কিনলে বাকি সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়।”
স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুখরঞ্জন দাস বলেন, “আমার বেতনের তিন দিনের টাকা দিয়ে এক কেজি ইলিশ কিনতে হয়। সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকলে একদিন ইলিশ শুধু জাদুঘরের মাছ হয়ে যাবে।”
বরগুনা জেলা মৎসজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানিয়েছেন, “ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষ খেতে পারছে না। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাজারে নজরদারি থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের কারণে কার্যকর দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।
শের-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রিপন কুমার মন্ডল মন্তব্য করেছেন, “বর্তমানে ইলিশ বিলাসী পণ্যে পরিণত হয়েছে। সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি সীমিত করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।”