প্রবাসীদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পৌঁছাতে গিয়ে নানা অতিরিক্ত খরচ ও লুকানো চার্জের কারণে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ‘নালা’র হিসাব অনুযায়ী, কেবল ট্রান্সফার ফি, অপ্রকাশিত চার্জ ও প্রতিকূল বিনিময় হারের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১৬২ হাজার কোটি টাকা) ক্ষতি হচ্ছে। এই অঙ্ক জাতীয় বাজেটের প্রায় ২ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং জিডিপির ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ সমান।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বিশেষ ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য প্রকাশ করে।
‘নালা’ জানায়, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০৫ বিলিয়ন ডলার। তবে উচ্চ ফি, লুকানো চার্জ ও প্রতিকূল বিনিময় হারের কারণে প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশে নালার প্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ দ্রুত, নিরাপদ ও বিনা খরচে দেশে পৌঁছে দেওয়া। বিদেশে থাকা শ্রমজীবীরা প্রচণ্ড কষ্ট করে যে অর্থ উপার্জন করেন, তা শুধু পরিবারকে টিকিয়ে রাখে না, জাতীয় অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কেবল টাকা পাঠানোর সেবা নয়, প্রতিটি লেনদেনে আস্থা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে প্রবাসীরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারেন— তাদের অর্থ নিরাপদে, দ্রুত এবং অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই দেশে পৌঁছাচ্ছে। এই লক্ষ্যে লুকানো চার্জ, অপ্রয়োজনীয় খরচ ও দেরি দূর করতে নালা কাজ করছে।”
২০২১ সালে যাত্রা শুরু করা ‘নালা অ্যাপ’ ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে এর ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের ২১টি দেশ থেকে সরাসরি বাংলাদেশে টাকা পাঠানো যাচ্ছে এ অ্যাপের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের প্রথম তিন দিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ৩৪৩ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা)।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আরও সাশ্রয়ী ও স্বচ্ছভাবে দেশে পৌঁছাতে পারলে জাতীয় অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপস্থাপক তোমা রাশিদ। এতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।