Saturday, September 6, 2025
spot_imgspot_img
Homeদেশের খবরহাসপাতালের বেডে বিয়ে: দুর্ঘটনার মধ্যেও মিলল আনন্দের মুহূর্ত

হাসপাতালের বেডে বিয়ে: দুর্ঘটনার মধ্যেও মিলল আনন্দের মুহূর্ত

হাসপাতালের বেডেই নতুন বর আছেন, হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ এবং মাথায় টোপর পরে। নববধূ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পান পাতায় মুখ ঢেকে তাকে প্রদক্ষিণ করছেন। পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের সঙ্গে মালাবদল ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে হাসপাতালেই সম্পন্ন হলো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

মানিকগঞ্জ জেলার চানমিয়া লেনের বাসিন্দা অরবিন্দ সাহার ছেলে আনন্দ সাহা এবং ঘিওরের বানিয়াজুড়ির বাসিন্দা, স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অমৃতা সরকারের হাসপাতালের বেডে বিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক ও অন্যান্য রোগীরাও এই বিয়ের সাক্ষী ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতের এই আয়োজনের কিছু ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত আনন্দ সাহা এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তার দুই হাত ও এক পায়ের হাড় ভেঙে গেছে, কোমরের হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, আনন্দের সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও অন্তত তিন মাস সময় লাগতে পারে। এ কারণে আগে থেকেই ঠিক হওয়া বিয়ের অনুষ্ঠান হাসপাতালের বেডেই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রোগীর পরিবারের অনুরোধে হাসপাতালের একটি অপ্রয়োগী ফ্লোর পরিচ্ছন্ন করে স্বল্প পরিসরে বিয়ের আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। অন্যান্য রোগীদের কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য আয়োজনটি আইসোলেটেডভাবে করা হয়, বিবিসি বাংলাকে বলেন আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল এন্ড ইউনিট প্রধান ডা. সিরাজুল ইসলাম।

হাসপাতালের বেডে এই আয়োজনের কারণ ছিল, গত ৭ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মোটরবাইকের দুর্ঘটনার শিকার হওয়া আনন্দ সাহার গুরুতর আঘাত। দুর্ঘটনার ফলে তার দুই হাত ও ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায় এবং কোমরের হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ২০ দিন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর তাকে মানিকগঞ্জের আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, দুর্ঘটনার আগে ১১ জুলাই আনন্দ ও অমৃতা সরকারের মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এরপর ১৪ ডিসেম্বরের জন্য বড় আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল। দুর্ঘটনার কারণে বিয়ের তারিখ সামান্য এগিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর করা হয়। আনন্দের চাচাতো ভাই অমি সাহা জানান, পরিবারের সদস্যরা শহরে থাকায় এবং অসুস্থতার কারণে দেখাশোনা কঠিন হওয়ায় হাসপাতালের বেডেই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা বলেন, আহত হলেও আনন্দের শারীরিক অবস্থা এখন উন্নতি হয়েছে। রোগীর পরিবার হাসপাতালের কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করলে চিকিৎসক ও প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শে এ আয়োজন সম্ভব হয়। হাসপাতালের মেডিকেল এন্ড ইউনিট প্রধান ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা যারা সেখানে ছিলাম, অনুভব করছিলাম যেন আমরা নিজেও বিয়ের অংশ। হাসপাতালের সকলের মধ্যেই আনন্দের অনুভূতি বিরাজ করছিল।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments