সার্বিয়ায় আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে দেশটির পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) নোভি সাদ শহরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে।
আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, আগাম নির্বাচন হলে প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচ ও তার ক্ষমতাসীন সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি (এসএনএস) ক্ষমতা হারাতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নোভি সাদের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হন। তাদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল—’আমরা অবরোধ চাই না, আমরা নির্বাচন চাই’ এবং ‘শিক্ষার্থীদের জরুরি দাবি: নির্বাচন দাও’। এ সময় তারা প্রেসিডেন্ট ভুচিচের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন অনুষদের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ফ্লেয়ার নিক্ষেপ করলে পুলিশ পাল্টা টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুঁড়ে তাদের পিছনে ঠেলে দেয়। রাতের সংবাদে প্রেসিডেন্ট ভুচিচ জানান, সংঘর্ষে অন্তত ১১ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে কতজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন, সে তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের অনুমতি দেব না। সার্বিয়া একটি শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র।’ পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। ভুচিচ জানিয়েছেন, রোববার তার সমর্থকেরা সার্বিয়ার বিভিন্ন শহরে পাল্টা সমাবেশ আয়োজন করবেন।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বর নোভি সাদের নবনির্মিত রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকে সার্বিয়ায় প্রতিবাদ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা দুর্নীতি ও সরকারি অব্যবস্থাপনার জন্য এই দুর্ঘটনাকে দায়ী করে বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধসহ ধারাবাহিক বিক্ষোভ চালিয়ে আসছেন। বেশিরভাগ সময় বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও গত ১৩ আগস্ট প্রথমবার বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটে, যেখানে পুলিশ ও সাধারণ মানুষ আহত হন। শিক্ষার্থী, বিরোধী দল এবং দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনগুলো প্রেসিডেন্ট ভুচিচ ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর সহিংসতা, গণমাধ্যম স্বাধীনতা দমনের অভিযোগ তুলেছে। যদিও ভুচিচ ও তার সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বিক্ষোভকারী নেবোজা কোরাচ বলেন, ‘সমাধান একটাই, নির্বাচন দিতে হবে। আমরা চাই শান্তি ও গণতন্ত্রের বিজয় হোক এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করুক। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই সরকার পরিবর্তিত হবে এবং সমস্যার সমাধান হবে।’