নেপালে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক আন্দোলন দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ গণআন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। জেন-জির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই আন্দোলনের চাপের কারণে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই পদত্যাগ নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল।
তবে পদত্যাগের পরপরই দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ও অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। পার্লামেন্ট ভবন, সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি ভবনগুলোতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কারাগারও নিরাপদ থাকে না—সেখানে হামলা চালিয়ে শতাধিক কয়েদিকে পালাতে সাহায্য করা হয়, যা দেশের আইনশৃঙ্খলার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা জেন-জি এই সহিংসতা ও ভাঙচুরের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, তাদের আন্দোলন হাইজ্যাক করেছে একটি ‘সুবিধাবাদী’ দল, যা আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যকে বিকৃত করেছে এবং সারাদিন অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে সেনাবাহিনী দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নেয়। ভোর থেকে রাজধানী ও অন্যান্য শহরে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এছাড়া সন্ধ্যা থেকে পরের দিনের সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পর আজ সকাল থেকে কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সাধারণ মানুষ সেনার নির্দেশ মেনে ঘরে অবস্থান করেন এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে রাস্তায় বের হননি।
যারা বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন, তাদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী লাউডস্পিকারে বারবার সতর্কতা দিচ্ছে, “অপ্রয়োজনীয় কাজে কেউ রাস্তায় বের হবেন না।” ইতিমধ্যে কিছু তরুণ রাস্তায় বের হয়ে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিষ্কার ও পুনর্গঠন কাজে হাত দিয়েছেন।
এদের মধ্যে রয়েছে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী সাং লামা। সে আন্দোলনে অংশ নেননি, তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিষ্কার করার দায়িত্ব নিয়েছেন। সাং লামা সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, “নেপালে বহু বছর ধরে দুর্নীতি ও দুঃশাসন চলছে। এবার আমরা আশা করি, এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দেশ থেকে এসব সমস্যা দূর হবে। নতুন প্রজন্মের জন্য আমরা চাই ন্যায় ও স্বচ্ছতার সমাজ। আমাদের আশা সত্যিই এবার পূর্ণ হবে।”
সামগ্রিকভাবে নেপালের পরিস্থিতি দেখায়, রাজনৈতিক আন্দোলন যদিও গণতান্ত্রিক দাবির প্রতিফলন হতে পারে, কিন্তু কখনো কখনো তা অন্যের দ্বারা দখল বা বিকৃত হয়ে যেতে পারে। সেনাবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ ও কঠোর বিধিনিষেধ রাজধানীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণ মানুষ ও তরুণ প্রজন্মের সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও স্থিতিশীলতা নেপালের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা সামলাতে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।