দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ—শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপাল—চার বছরের ব্যবধানে প্রত্যক্ষ করল একই রকম গণঅভ্যুত্থানের চিত্র। পার্থক্য ছিল কেবল পতাকার রং ও স্লোগানে, কিন্তু ফলাফল এক—জনতার প্রবল বিক্ষোভে সরকারের পতন।
২০২২ সালের জুলাইয়ে আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। ওই গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া।
এরপর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে কোটাবিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগবিরোধী বৃহত্তর গণবিক্ষোভে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। তার সরকারি বাসভবন গণভবনও দখল করে নেয় আন্দোলনরত ছাত্রসমাজ।
সবশেষে, ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নেপালে দেখা গেল একই দৃশ্য। ছাত্র-যুবকদের তীব্র বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির দল—কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল)—এবং তাদের সহযোগী নেপালি কংগ্রেসের কার্যালয় আক্রমণের শিকার হয়। সরকারের একাধিক মন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনাও ঘটে। কোথাও বাসভবনে আগুন জ্বলে ওঠে, কোথাও নেতাদের রাস্তায় ফেলে গণপিটুনি দেওয়া হয়। যদিও শ্রীলঙ্কার গোতাবায়া ও বাংলাদেশের শেখ হাসিনার মতো দেশ ছাড়ার খবর এখনো নিশ্চিত নয়, শোনা যাচ্ছে—ওলি হয়তো দুবাই চলে যেতে পারেন নিজের নিরাপত্তার জন্য।
এর আগে নেপাল সরকার গত সপ্তাহে ফেসবুক, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ ঘোষণা করে। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে তরুণদের মধ্যে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালালে শুধু কাঠমান্ডুতেই ১৮ জনসহ ১৯ জন প্রাণ হারান। এর পরদিনই প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে আরও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জনতার চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
ফলাফলে স্পষ্ট—চার বছরে তিনটি দেশেই জনতার আন্দোলনের নিশানায় ছিল শাসকের আসন, আর জনগণের রোষানলেই ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে।