মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কাতার, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে গাজায় একের পর এক আক্রমণে অন্তত ১৫০ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের বৈঠক লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। বৈঠকটি গাজা যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছিলেন হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা খালিল আল-হায়ারের ছেলে, তার কার্যালয়ের পরিচালক, তিনজন দেহরক্ষী এবং একজন কাতারি নিরাপত্তাকর্মী। তবে শীর্ষ নেতারা বেঁচে গেছেন।
এটি গত ৭২ ঘণ্টায় ইসরায়েলের ষষ্ঠ বিদেশি হামলা এবং চলতি বছরের সপ্তম।
গাজায় অব্যাহত বোমাবর্ষণে সোমবার থেকে অন্তত ১৫০ জন নিহত এবং ৫৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। শুধু সোমবারই ৬৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৩২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৪ জন ত্রাণ বিতরণের সময় মারা যান এবং আরও ছয়জন অনাহারে মৃত্যুবরণ করেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছেন। ইসরায়েলি বিমান গাজার উচ্চ ভবন, অবকাঠামো ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে, ফলে বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় এই যুদ্ধে মোট ৬৪,৬৫৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪০৪ জন ক্ষুধাজনিত কারণে মারা গেছেন।
লেবাননের বেকা ও হারমেল জেলায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় সোমবার অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনা ও অস্ত্রগুদাম লক্ষ্য করেছে। তবে স্বাধীনভাবে এ তথ্য যাচাই হয়নি। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিন লেবাননে হামলা চালাচ্ছে।
সিরিয়ার হোমসের একটি বিমানঘাঁটি ও লাতাকিয়ার কাছাকাছি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে সোমবার রাতে হামলা চালানো হয়। স্থানীয়রা বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তিউনিসিয়ার উপকূলে ‘ফ্যামিলি বোট’ নামের জাহাজে সন্দেহভাজন ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালানো হয়। জাহাজে ছয়জন যাত্রী ছিলেন, আগুন লাগলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরের রাতে ‘আলমা’ জাহাজেও হামলা হয়, তবে হতাহতের খবর নেই।
ইয়েমেনে বিমান হামলায় সানার বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে একই বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। এর আগে গত ২৮ আগস্ট ইয়েমেনে হুথি সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
এভাবে মাত্র তিন দিনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল গাজা, কাতার, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।