২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ইরাকে ব্যাপক সামরিক হামলা চালায়। এই হামলার অজুহাত হিসেবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া সন্ত্রাসী হামলাকে ব্যবহার করা হয়। ইরাকে মার্কিন, ব্রিটিশ ও অন্যান্য দেশের যৌথ হামলায় লাখো মানুষ প্রাণ হারান।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চারটি বিমান ছিনতাই করে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আঘাত হানে, এছাড়া একটি বিমান মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ মারা যান। এরপর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরুর ঘোষণা দেন।
ইরাকে হামলার মূল কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ দাবি করেন, ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করছেন। তবে এই অভিযোগের কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ কখনো পাওয়া যায়নি। জাতিসংঘের পরিদর্শকরাও ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পাননি।
যুদ্ধ শুরুর আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই অভিযানের পক্ষে ভোট দেয়নি। তবুও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ ২৯টি দেশ “কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং” নামে একটি জোট গঠন করে, যাতে পোল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও স্পেনও অংশ নেয়। অবশেষে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে হামলা শুরু হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যেই ইরাকি সেনা পরাজিত হয় এবং রাজধানী বাগদাদ দখল হয়। সাদ্দাম হোসেন পালিয়ে গেলেও ২০০৪ সালের জুনে তাকে আটক করা হয় এবং ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এই যুদ্ধে অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষতি ব্যাপক হয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৮৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং ব্রিটেন প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দুই লাখের বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং ৩০–৪০ হাজার ইরাকি সেনা নিহত হন, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। শিশুদের ওপর প্রভাবও ভয়ঙ্কর; ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছিল এবং প্রায় ৭০ শতাংশ শিশু মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিল।
ইরাকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট মার্কিন কমব্যাট সেনারা দেশ ছাড়ে এবং ২০১১ সালের ডিসেম্বরে চূড়ান্তভাবে সব সেনা প্রত্যাহার করা হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ ৪৪ লাখের বেশি ইরাকি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
যুদ্ধের ফলে সাদ্দাম হোসেনের শাসন শেষ হলেও, ইরাকের জনগণ ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ, বাস্তুচ্যুতি ও মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়। এটি একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও বিতর্কিত যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম।