আন্তর্জাতিক মানে যাত্রীসেবা উন্নত করতে ইউনিভার্সাল টিকেটিং সিস্টেম (ইউটিএস) চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যবস্থায় ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া দেওয়া যাবে। তবে এই নতুন টিকেটিং সিস্টেম বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) দরপত্র আহ্বান করলেও অভিযোগ উঠেছে, নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই বারবার সময় বাড়ানো হচ্ছে। পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পরও দরপত্র গ্রহণ, জামানত ছাড়াই প্রস্তাব জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং অংশীদার দুই প্রতিষ্ঠানের একই দরপত্রে অংশগ্রহণের মতো ঘটনা ঘটেছে।
বিপিপিএর তথ্যমতে, ইউটিএস পরিচালনায় ঠিকাদার নিয়োগের জন্য গত ২৮ মে দরপত্র আহ্বান করা হয়। জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৩০ জুন। পরে সময় বাড়িয়ে ২১ জুলাই করা হয়। মোট আটটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও এর মধ্যে দুটি জামানত জমা দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তাদের বাদ পড়ার কথা থাকলেও ডিএমটিসিএল তাতে আপত্তি জানায়নি। এমনকি নির্ধারিত সময় পেরিয়ে আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিলে সেগুলোও গ্রহণ করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এডিএন টেলিকম লিমিটেড ও সহজ লিমিটেড—যারা পারস্পরিক ব্যবসায়িক অংশীদার—তারা আলাদাভাবে এই দরপত্রে অংশ নেয়। নিয়ম অনুযায়ী এটি অযোগ্য ঘোষণার মতো পরিস্থিতি তৈরি করলেও ডিএমটিসিএল আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এ বিষয়ে সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেন, “বিশেষ কাউকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে সময় বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়ন চলছে।”
সহজ লিমিটেডের এমডি মালিহা কাদির কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রতিষ্ঠানের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার কর্নেল (অব.) আমীন জানান, আর্থিক যাচাই প্রক্রিয়ায় সহজ বাদ পড়েছে। তিনি আরও বলেন, “এডিএনের সঙ্গে সহজের অংশীদারত্ব থাকলেও এ বিষয়ে আর আলোচনা করার প্রয়োজন নেই।”
ডিএমটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক শাব্বীর আহমদ বলেন, “দরপত্র এখন মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে। কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”
প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামছুল হক মনে করেন, আধুনিক টিকেটিং সিস্টেম শুরু থেকেই চালু করা উচিত ছিল। তার মতে, “বিশ্ব এগিয়ে গেছে, আমরা এখনো পুরোনো পদ্ধতিতে আছি। ইউটিএস যত দ্রুত কার্যকর হবে, যাত্রীরা তত বেশি উপকৃত হবে।”