আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদের সংস্কার কার্যকর করতে চাইলেও, সংসদের বাইরে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন বৈধ কি না—এ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে সরকারকে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সংস্কারের পথে যেতে হতে পারে।
সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর কমিশন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে তিন উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, গণভোট এবং সাংবিধানিক আদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বিএনপি পরিষ্কার জানিয়েছে, নির্বাচিত সংসদ ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন সম্ভব নয়। তারা সাংবিধানিক আদেশের কড়া বিরোধী। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল বলছে—সংবিধান সংস্কার ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করবে না। তাদের মতে, জনগণের অভিপ্রায়ই সংবিধান সংস্কারের বৈধতা দেয়।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সনদের ৮৪টি সংস্কারের মধ্যে ৩৪টির জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। বিএনপি ইতোমধ্যে উচ্চকক্ষ গঠন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনের আগেই সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার কার্যকর দেখতে চায়।
বৈঠকে উপস্থিতদের মতে, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস শুরুতে শুধু রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যকর করার পক্ষে ছিলেন। তবে এখন তিনি মনে করছেন, মৌলিক সংস্কার নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করতেই হবে। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে, যদিও বিএনপির আপত্তির কারণে এ সিদ্ধান্তে অটল থাকা কঠিন হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইতোমধ্যে সনদের চূড়ান্ত খসড়া দেওয়া হয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে, তারা সনদে সই করবে, তবে বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী সংসদ। জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন জানিয়েছে, আগে সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে শুধু সংস্কারই নয়, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনও ভণ্ডুল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কমিশন। সেক্ষেত্রে সংকট ও অস্থিরতা সামলানো সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।