Saturday, September 13, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকনেপালে তরুণদের বিক্ষোভে সরকারের পতন: দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচন

নেপালে তরুণদের বিক্ষোভে সরকারের পতন: দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচন

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা অলি তরুণ আন্দোলনকারীদের ‘জেন-জি’ বলে ব্যঙ্গ করার মাত্র দুই দিন পরই পদত্যাগে বাধ্য হন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ গুলি চালালে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত মোড় নেয়।

৮ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার পর হাজারো তরুণ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে ঢুকলে পুলিশ গুলি চালায়, নিহত হন অন্তত ১৯ জন। পরদিন আরও বড় বিক্ষোভে সংসদ ভবন, রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও গণমাধ্যম কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ হয়। টানা অস্থিরতার মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেন এবং শেষে অলি নিজেও দায়িত্ব ছাড়েন। বর্তমানে বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভেঙে দেওয়া, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও গুলির ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবি করছেন। রাজধানী কাঠমান্ডুতে কারফিউ চলছে, সেনা মোতায়েন রয়েছে।

নেপালে তরুণদের আন্দোলনের ঐতিহ্য

নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্র-যুব আন্দোলন দীর্ঘদিনের বাস্তবতা। ১৯৫১ সালে রানা শাসনের পতন, ১৯৯০ সালে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বিলুপ্তি এবং ২০০৬ সালে রাজতন্ত্রের অবসানে তরুণদের আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০০৮ সালে দেশ প্রজাতন্ত্র হয়, তবে ক্ষমতা ঘুরে-ফিরে তিন দল—ইউএমএল, মাওবাদী সেন্টার ও নেপালি কংগ্রেসের নেতাদের হাতে থেকেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত ছিল ক্ষোভের তাৎক্ষণিক কারণ। কিন্তু মূল চালিকা শক্তি ছিল দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পুরোনো নেতৃত্বের প্রতি তরুণদের অনাস্থা। আন্দোলনকারীরা নিজেদের আন্দোলনকে ‘জেন-জি মুভমেন্ট’ বলে অভিহিত করছেন।

নতুন নেতৃত্বের সন্ধান

অলি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কয়েক দশক ধরে একই নেতাদের হাত ঘুরে-ফিরে সরকার গঠনের ধারার বিরুদ্ধে তরুণরা এবার নতুন মুখ চাইছে। সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী নেতৃত্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি ও কাঠমান্ডুর জনপ্রিয় মেয়র ও র‍্যাপার বালেন্দ্র শাহ (বালেন শাহ)-এর নাম আলোচনায় রয়েছে।

আঞ্চলিক বৈশ্বিক গুরুত্ব

চীন ও ভারতের মাঝখানে অবস্থানকারী নেপাল ঐতিহাসিকভাবে ভারতের ঘনিষ্ঠ থাকলেও অলির সময়ে বেইজিংয়ের প্রভাব বাড়ে। তার পতনের ফলে আঞ্চলিক কূটনৈতিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে। ভারত নেপালে নিজেদের প্রভাব পুনরায় জোরদার করার সুযোগ পাবে। চীনের জন্য এটি ধাক্কা, আর পাকিস্তান ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করছে দূর থেকে। তবে তরুণদের আন্দোলনে রাজতন্ত্রে ফেরার দাবি নেই।

তরুণদের নতুন অধ্যায়

নেপালের তরুণদের এই আন্দোলন কেবল একটি সরকারের পতন নয়, বরং রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সাংবাদিক রজনীশ ভান্ডারির মতে, এটি দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ। নাগরিক সমাজের আশঙ্কা, তরুণদের কণ্ঠ উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে আরও বড় অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

শ্রীলঙ্কা (২০২২) ও বাংলাদেশে (২০২৪) যেমন তরুণদের আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন ঘটেছিল, নেপালও দক্ষিণ এশিয়ার সেই ধারাবাহিকতার আরেকটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়াল। বিশ্লেষকদের মতে, এই সঙ্কট শুধু নেপালের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় তরুণ প্রজন্মের উত্থান ও আঞ্চলিক রাজনীতির ভারসাম্যে পরিবর্তনের সংকেত।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments