Saturday, September 13, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকনেপালের জেন-জি আন্দোলন: যুবসমাজের ক্ষোভ নাকি ভূরাজনৈতিক কৌশল?  

নেপালের জেন-জি আন্দোলন: যুবসমাজের ক্ষোভ নাকি ভূরাজনৈতিক কৌশল?  

নেপালের তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নেমেছে, যখন রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। সরকার বলেছিল, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য অরাজকতা, গুজব ও বিভাজন রোধ করা। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও যুবসমাজ এটি সরকারি দুর্নীতি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সমালোচনা দমনের চেষ্টা হিসেবে দেখেছে। তরুণরা সামাজিক মাধ্যমকে শুধু বিনোদনের জন্য নয়, চাকরি, শিক্ষা ও মতপ্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। তাই এই নিষেধাজ্ঞা তাদের কণ্ঠরোধের প্রতীক হিসেবে ধরা হলো। ফলস্বরূপ, হাজার হাজার তরুণ রাজধানী কাঠমান্ডু ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে।

মিডিয়ায় ‘নেপো কিডস’ বা ‘নেপো বেবি’ হ্যাশট্যাগে এই আন্দোলন জোরদার হয়েছে। এ শব্দগুলো দ্বারা বোঝানো হয়, যেসব সন্তান বা আত্মীয় নিজের যোগ্যতা না দিয়ে পারিবারিক প্রভাব, অর্থ বা খ্যাতির মাধ্যমে সুযোগ পায়, তারা বিশেষ সুবিধাভোগী। রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবন ও সুযোগ-সুবিধা তরুণদের ক্ষুব্ধ করেছে।

এদিকে, ‘হামি নেপাল’ নামে এক এনজিও এবং বারবারা ফাউন্ডেশন এই আন্দোলনের সহায়তা করেছে। মার্কিন লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বারবারা অ্যাডামস প্রতিষ্ঠা করা এই ফাউন্ডেশন নেপালে সামাজিক খাতের উন্নয়নে কাজ করছে।

নেপালের অর্থনীতি ও বাণিজ্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল, রাজনীতিতেও ভারতের প্রভাব রয়েছে। অন্যদিকে চীনের সমর্থন ও বিনিয়োগ নেপালের কমিউনিস্ট দলগুলোকে প্রভাবিত করছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন সড়ক, রেল ও হাইড্রো প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছে, যা ভারতের উদ্বেগের কারণ। যুক্তরাষ্ট্রও মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন মাধ্যমে নেপালে সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

জেন-জি আন্দোলন ও রেজিম চেঞ্জের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উপাদানও কাজ করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। নেপালের তরুণ প্রজন্ম নতুন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছে। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ প্রকাশ্যে যুবকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আন্দোলনটি প্রচলিত রাজনৈতিক ধারার চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

অবশ্যই, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন। আবার বিক্ষোভকারীরাও সরকারি ভবন লক্ষ্য করে সহিংসতা চালিয়েছে। সেনাবাহিনী শান্তিপূর্ণ থাকার, অস্ত্রধারীদের আত্মসমর্পণ ও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলন যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে নেপালের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments