পাহাড়ি দুর্গম পথ কিংবা আঁকাবাঁকা ট্রেইলে সাইকেল চালানো এক ভিন্ন রকমের দুঃসাহসিক খেলা হলো মাউন্টেন সাইক্লিং বা মাউন্টেন বাইকিং (এমটিবি)। এই খেলা যেমন রোমাঞ্চ আর চ্যালেঞ্জ এনে দেয়, তেমনি প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার এক অনন্য অভিজ্ঞতাও দেয়। লিখেছেন আশরাফুল ইসলাম আকাশ।
বিশ্বজুড়ে সাইক্লিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। অলিম্পিক, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ কিংবা সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের মতো বড় আসরে এর প্রতিযোগিতাও হয়। অথচ বাংলাদেশে সাইকেলের ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও প্রতিযোগিতা বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি গড়ার চেষ্টা খুব কমই দেখা যায়। মাউন্টেন সাইক্লিং বিশ্বের বহু দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও এখানে এখনও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। তবে সম্প্রতি দেশে এ খেলার প্রচারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আয়োজকদের মতে, দেশি-বিদেশি সাইক্লিস্টদের নিয়ে প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারলে বাংলাদেশের পর্যটনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। পাহাড়ের সৌন্দর্য আর দুই চাকার রোমাঞ্চ মিলিয়ে বিশ্বের কাছে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের বৈচিত্র্য।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত তিনবার মাউন্টেন সাইক্লিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ‘ট্যুর ডি সিএইচটি’ নামে আয়োজিত এই আসর সাজেক থেকে শুরু হয়ে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ঘুরে থানচিতে শেষ হয়। প্রতিযোগীদের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করতে হয়। এতে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিযোগীরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের পরিচালক খন্দকার শাহিনুর রহমান জানান, তারা তিনবার এই প্রতিযোগিতা করেছেন এবং প্রতিবার শতাধিক সাইক্লিস্ট এতে অংশ নিয়েছেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ের সৌন্দর্য তুলে ধরা, নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং মাউন্টেন সাইক্লিংকে জনপ্রিয় করা। বড় প্রাইজমানির কারণে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ভালো সাড়া মেলে। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর আগামী বছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে আবারও আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, “ট্যুর ডি সিএইচটি ইভেন্টে প্রতিযোগীদের প্রথম দিনে ১৩০ কিলোমিটার, দ্বিতীয় দিনে ৯০ কিলোমিটার এবং শেষ দিনে ৬০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হয়। প্রতিটি ধাপে সাজেক, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও থানচিতে ক্যাম্প বসানো হয়।”
অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী তাম্মাত বিল খয়ের দুই চাকার সাইকেলে পৌঁছে গেছেন এভারেস্ট বেসক্যাম্পে। হিমালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে একে একে আটটি পর্বত জয় করেছেন তিনি। তার অভিজ্ঞতায় সাইক্লিং শুধু শখ নয়, বরং জীবনকে নতুনভাবে জানার এক দারুণ উপায়।
তাম্মাত বলেন, “দেশের ভেতরেও অসাধারণ সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। নিয়মিত সাইক্লিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে পর্যটনশিল্প অনেক এগিয়ে যাবে। নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো আমাদেরও সাইক্লিংকে কাজে লাগানো উচিত।”
যদিও অনেক আক্ষেপ আছে, তবু তিনি এক স্বপ্ন আঁকছেন—দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যেন একজন সাইক্লিস্ট তৈরি হয়। তার কথায়, “এই পরিবর্তন একদিন আসবেই। দেশের পাহাড়ি পথগুলোতে নিয়মিত প্রতিযোগিতা হলে নতুন অ্যাথলেট তৈরি হবে, পাশাপাশি পর্যটনশিল্পও বিকশিত হবে।”