প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মানুষ কারও অধীনে চাকরি করার জন্য পৃথিবীতে আসে না; বরং মানুষের জন্ম উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য। তাই দেশের আর্থিক কাঠামো এমনভাবে সাজাতে হবে যেন প্রত্যেকে নিজস্ব উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে।
রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর খিলজি রোডে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নতুন প্রজন্ম ভিন্ন চিন্তাধারায় সমৃদ্ধ। গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও এখন প্রযুক্তি ও জ্ঞানসমৃদ্ধ। তাদের জন্য এমন একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা এককভাবে কিংবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যোগ নিতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমরা যদি এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলতে পারি যেখানে মানুষ নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারবে, চাইলে বিনিয়োগকারী হিসেবেও যুক্ত হতে পারবে—তাহলেই পরিবর্তন আসবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, এরই মধ্যে কয়েক লাখ উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। অনেকেই পরিবার বা দলগতভাবে কাজ করছে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরও সম্প্রসারণ সম্ভব।
পিকেএসএফ-এর জন্ম প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সূচনা হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের ২০ কোটি টাকা সহায়তা ঘিরে। সেই অর্থ নিয়েই সরকার, পরিকল্পনা কমিশন, দাতা সংস্থা ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদ পর্যন্ত মতবিনিময় করেন। পরে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন নাম ঠিক হয়।
তিনি আরও বলেন, পিকেএসএফ মাইক্রোক্রেডিট দেয় না; বরং উদ্যোক্তাদের অংশীদার হিসেবে কাজ করে। ভবিষ্যতে ঋণের পরিবর্তে সরাসরি বিনিয়োগ মডেল চালু করা দরকার। কেউ যদি পাঁচ লাখ টাকা চায়, আমরা দেব, তবে এর বিনিময়ে আমাদের শেয়ার থাকবে। উদ্যোক্তা সফল হলে ধীরে ধীরে সেই অংশ ক্রয় করে পুরো মালিকানা নিজের হাতে নিতে পারবে।
ইউনূসের মতে, পুরনো আইন এখনকার বাস্তবতায় অনেকাংশে অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পিকেএসএফ-এর নিজস্ব আইন সংস্কার করে আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেক মানুষকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ওপর আস্থা আছে। অর্থের অভাব হবে না। আমরা যদি সমন্বিত আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি, তাহলে প্রকৃত উদ্যোক্তা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পিকেএসএফ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।