Sunday, September 14, 2025
spot_imgspot_img
Homeদেশের খবরপাইকগাছায় বেড়েছে অবৈধ কয়লা চুল্লি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

পাইকগাছায় বেড়েছে অবৈধ কয়লা চুল্লি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদনের চুল্লির সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশাসনের নীরবতা এবং প্রভাবশালীদের সমর্থনে বছরের পর বছর চলতে থাকা এই কার্যক্রম এখন পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।

সরাসরি পরিদর্শনে দেখা গেছে, চাঁদখালী বাজার সংলগ্ন পাইকগাছা-কয়রা প্রধান সড়কের পাশে কয়লার চুল্লির সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। এতে শুধু বনজ সম্পদই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ধোঁয়া, যা স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব চুল্লির ধোঁয়ায় রাস্তায় চলাচলও দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। অনেকেই চোখে জ্বালা, শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে ভুগছেন। প্রতি মাসে একটি চুল্লিতে ৩-৪ বার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি হয়। এর ফলে মাসে ৮০–১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হয়, যা বছরে প্রায় ১২ লক্ষ মণ কাঠের সমান এবং দেশের বনজ সম্পদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি।

কাঠ সংগ্রহের জন্য সরকারি ও বেসরকারি বন থেকে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করছে এবং জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীর জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, চুল্লির মালিকরা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে ‘ম্যানেজ’ করে দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যক্রম চালাচ্ছেন। জানা গেছে, চুল্লির মালিকদের একটি সমিতি ও মাসিক ফান্ড রয়েছে, যার মাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ৬৯টি চুল্লির মধ্যে মাত্র ৫টি চুল্লি ভেঙে ফেলা হয়। বাকি চুল্লিগুলো বন্ধ করতে মুচলেকা নেওয়া হলেও তিন বছর পার হওয়ার পরও চুল্লিগুলো চালু রয়েছে।

চাঁদখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ সরদার বলেন, “এই চুল্লিগুলো বায়ু দূষণের পাশাপাশি পরিবেশ নষ্ট করছে। বন উজাড় হচ্ছে। অভিযোগ আসলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী এফএমএ রাজ্জাক বলেন, “কয়লার চুল্লি বন্ধে সংবাদ প্রকাশের পর সাময়িক অভিযান হলেও এখন স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন। না হলে পরিবেশ ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।”

খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম জানান, “আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পুনরায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments