ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। পিআর পদ্ধতিসহ পাঁচ দফা দাবিকে সামনে রেখে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান কেবল ক্ষমতার পালাবদলের জন্য হয়নি। জনগণ জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে স্বৈরতন্ত্রকে চিরতরে বিদায় জানাতে, রাষ্ট্রের অচলাবস্থা দূর করতে এবং গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতার ভিত্তি শক্তিশালী করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন সংস্কার ও বিচারের পরিবর্তে নির্বাচনকেই মুখ্য করা হচ্ছে, যা দেশকে আবার পুরোনো অশুভ ব্যবস্থায় ঠেলে দিতে পারে।
চরমোনাই পীর জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “জুলাইয়ে যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এই আন্দোলনে নামছি। ইতোমধ্যেই সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় রাজপথের কর্মসূচি নেওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।”
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গড়িমসি করায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও সনদ ঘোষণা করা হয়নি। ভবিষ্যৎ স্বৈরতন্ত্র রোধের জন্য অপরিহার্য আইনি সংস্কারে একটি মহল বারবার বাধা দিয়েছে। ফলে সনদ কার্যত প্রস্তাবনার দলিলে পরিণত হয়েছে, অথচ এটি হওয়া উচিত ছিল আগামীর বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা।”
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতিকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, “জাতীয় পার্টি বিগত সময়ে স্বৈরতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার সহযোগী ছিল। এখনো তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদের সকল দোসরদের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।”
তিনি আবারও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানান। তাঁর মতে, বিগত ৫৪ বছরে প্রচলিত পদ্ধতিতে যে নির্বাচন হয়েছে, তা দেশকে কেবল পিছিয়েই দিয়েছে। তাই সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন ছাড়া বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হলো—
১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
২. নির্বাচন উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমান সুযোগের পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গণহত্যার বিচার দ্রুত দৃশ্যমান করতে হবে।
৫. জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে।
দাবি আদায়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এগুলো হলো—
- ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল।
- ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি।
- ২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল।