দেশে সব শিশুকে স্কুলে যাওয়ার লক্ষ্যে বছরের শুরুতে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে। এই বছরও পাঠ্যবই সরবরাহের প্রক্রিয়া একই ছিল, তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছতে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় লেগেছে। এই সুযোগে ২৩টি ছাপাখানার তৈরি বিনামূল্যের পাঠ্যবই খোলাবাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি হয়েছে। বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পেয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২৩ ছাপাখানার মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখিত ২৩টি ছাপাখানার মধ্যে রয়েছে রাব্বিল প্রেস, হাওলাদার প্রেস, মেরাজ প্রেস, ফরাজি প্রেস, ফাইজা প্রেস, শাপলা প্রেস, দিগন্ত প্রিন্টার্স, সোহাগ প্রিন্টার্স, টাইম মিডিয়া প্রেস, লেটার অ্যান্ড কালার প্রেস, মেঘদ্যুত প্রেস, টাঙ্গাইল প্রেস, আলিফ প্রেস, মৌসুমী প্রেস, জনতা প্রেস, এস আর প্রিন্টিং প্রেস, আনন্দ প্রিন্টার্স, রেদওয়ানিয়া প্রেস, অক্সফোর্ড প্রেস, মোল্লা প্রিন্টিং প্রেস, অটো প্রিন্টিং প্রেস, সৃষ্টি প্রিন্টার্স ও গ্লোবাল প্রিন্টিং প্রেস। প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে, এই বই বিক্রিতে ১৬ জন পরিবহন কনট্রাক্টরের জড়িত থাকার তথ্য।
জনতা প্রেসের মালিক নজরুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘হ্যান্ডবিল আকারে এই তথ্য বিলি কারা করেছে তা আমি জানি না। তবে যারা বই চুরি ও বিক্রিতে জড়িত, তারা নিজেরাই দোষ ঢাকতে এই প্রচারণা করেছে। আমি বা আমাদের প্রতিষ্ঠান এতে জড়িত নই।’
মোল্লা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের মালিক মিন্টু মোল্লা জানিয়েছেন, পাঠ্যবই বেচাকেনার মূল হোতা হলেন আমিন আর্ট প্রেসের মালিক মো. সোহেল, সমতা প্রেসের মালিক রাকিব এবং পাঞ্জেরি প্রিন্টার্সের মালিক রায়হান। তারা অন্যান্য ছাপাখানার বই কম মূল্যে কিনে গুদামে সংরক্ষণ করে চড়া দামে বিক্রি করে। মিন্টু মোল্লা জানান, এই তিনজন এনসিটিবির বইয়ের ৩০% নিজস্বভাবে ছাপান, বাকিটা অন্য ছাপাখানার বই সংগ্রহ করে ইনার পরিবর্তন করে নিজের কোম্পানির নামে বিক্রি করেন। বইগুলো খোলাবাজারে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়, যদিও ছাপানোর খরচ মাত্র ৭০ টাকা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের উৎপাদন নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবু নাসের টুকু বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ২৩টি ছাপাখানা ও ১৬টি পরিবহন কনট্রাক্টরের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
জানা গেছে, বছরের শুরু থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যের বই খোলাবাজারে বিক্রি শুরু হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ করেছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বই যথাসময়ে তারা পাননি, তাই বাজার থেকে কিনে নিতে হয়েছে। এনসিটিবি’র কঠোর নজরদারিতে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি কম, যার ছাপানোর খরচ প্রায় ২০০ কোটি টাকা হতো।