সংবিধান সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের পরিবর্তে রাজনৈতিক সমঝোতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করা। জোরপূর্বক কোনো পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
গত রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে এই বার্তা দিয়েছেন। সংলাপের মাধ্যমে কমিশনের তৃতীয় ধাপের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সমঝোতা আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
ড. ইউনূস সংলাপে বলেন, “সমঝোতার পথই আমাদের একমাত্র সমাধান। জাতি হিসেবে আমাদের নবযাত্রার সুযোগ এসেছে, যার সঠিক সমাধান হলো রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠন।”
সরকার মনে করছে, সনদ বাস্তবায়নের কোনো পদ্ধতি চাপিয়ে দিলে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, আবার তা না করলে নির্বাচনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হতে পারে এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সংস্কার শেষ করতে হবে।
সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অন্যান্য দল নিজস্ব অবস্থান থেকে কিছুটা ছাড় দিয়েছে। তবে বিএনপি কিছু বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। জামায়াত এবং এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও নির্বাচনের আগে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি খুঁজে সমঝোতায় আসার পক্ষের।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “আপনারা মূল কাজটি করেছেন, সামান্য পথ বাকি। শেষ অংশের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। সমাপ্তি সুন্দরভাবে করলে নতুন জাতির জন্ম ঘটবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। সনদে স্বাক্ষরের জন্য বিএনপি ইতিমধ্যে প্রতিনিধির নাম পাঠিয়েছে। বিএনপি কিছু সংশোধনী রাখলেও তা গুরুতর নয়। সংবিধান ও আইনগত ভিত্তি ছাড়া সনদে স্বাক্ষর হবে না।
জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সনদ বাস্তবায়নের দুটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে— প্রভিশনাল সংবিধানিক আদেশ বা গণভোট। দলগুলো একমত না হলে জনগণ গণভোটে সিদ্ধান্ত দেবে। নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে এবং টেকসই সংবিধান সংস্কার করতে গণপরিষদ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।
সংলাপে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ এবং গণভোটের পথ উল্লেখ করেছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সবকিছু নির্ভর করছে শেষ অংশের সমঝোতার ওপর।