Monday, September 15, 2025
spot_imgspot_img
Homeআন্তর্জাতিকগাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত, ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা ৪২২ ছাড়িয়েছে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত, ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা ৪২২ ছাড়িয়েছে

অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন হামলায় একদিনে অন্তত ৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা সিটিতে বোমাবর্ষণে বহু ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে, যার মধ্যে কয়েকটি আবাসিক টাওয়ারও রয়েছে। হামলা শুরুর পর থেকে ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২২ জনে পৌঁছেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা। এছাড়া অপুষ্টির কারণে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। হামলায় গাজা সিটির ১৬টি ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এর মধ্যে তিনটি আবাসিক টাওয়ারও ধ্বংস হয়েছে।

গাজার রেমাল এলাকার আল-কাওসার টাওয়ারও ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যায়। অব্যাহত বোমাবর্ষণে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। ফিলিস্তিনি নাগরিক মারওয়ান আল-সাফি বলেন, “আমরা জানি না কোথায় যাব। সমাধান দরকার… আমরা এখানে মরছি।”

গাজার সরকারি গণমাধ্যমের বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলাকে গণহত্যা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির কৌশল হিসেবে নিন্দা জানানো হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল বলছে তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, তবে বাস্তবে স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আবাসিক ভবন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার অফিসও ধ্বংস হচ্ছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, গত চার দিনে গাজা সিটিতে অন্তত ১০টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি স্কুল এবং দুটি ক্লিনিক রয়েছে, যেখানে হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি বলেন, “গাজায় কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়, কেউ নিরাপদ নয়।”

হামলার মধ্যে হাজারো পরিবার দক্ষিণের আল-মাওয়াসির দিকে পালাচ্ছে। ইসরায়েল একে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ দাবি করলেও সেখানে হামলার ঘটনা ঘটছে। পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিরা জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে পানির ঘাটতি, খাবারের অভাব ও শৌচাগারের সংকটের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি নাগরিক আবেদআল্লাহ আরাম বলেন, “আমাদের পরিবার তীব্র পানির সংকটে রয়েছে। খাবার অপ্রতুল, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। শীত আসছে, নতুন তাঁবু প্রয়োজন। এই এলাকায় আর বেশি মানুষ রাখা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “এক সপ্তাহ আগে আশ্রয় কেন্দ্রেও আসার পর আমরা এখনও নিরাপদ আশ্রয় পাইনি। আমাদের কোনো আয় নেই, বাচ্চাদের খাওয়ানোর মতো কিছু নেই। বাস্তুচ্যুত হওয়া মানে যেন প্রাণটাই শরীর থেকে টেনে নেওয়া।”

জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) সতর্ক করেছে, আল-মাওয়াসির পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে। সংস্থার মুখপাত্র টেস ইঙ্গ্রাম বলেন, “গাজায় কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি কথিত মানবিক অঞ্চলও নয়। শরণার্থী শিবিরে জনসংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, ন্যূনতম চাহিদা পূরণও কঠিন হয়ে পড়ছে।”

তিনি আরও জানান, এক নারীকে গাজা সিটি থেকে উচ্ছেদের পর রাস্তায় সন্তান জন্ম দিতে হয়েছে। “এমন হাজারো পরিবার এখন টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments