নবজাতককে চুমু খাওয়ানো সাধারণত ভালোবাসার প্রকাশ মনে হলেও এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হালকা অসুবিধা সৃষ্টিকারী জীবাণু নবজাতকের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে, বিশেষ করে জীবনের প্রথম কয়েক সপ্তাহে। মুখ বা ঠোঁটে চুমু দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সরাসরি শিশুর শরীরে চলে যেতে পারে এবং বিপজ্জনক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও দুর্বলতা
নবজাতকরা জন্মের সময় সীমিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে আসে। প্রাপ্তবয়স্কদের মতো পরিপক্ব প্রতিরোধক কোষ তাদের শরীরে নেই, যার ফলে তারা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। তাই এমন সংক্রমণ যা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হালকা, নবজাতকের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস নবজাতকের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি সাধারণ সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে শিশুর চোখ, মুখ বা ত্বকে সংক্রমণ হলে রক্তপ্রবাহে বা অন্যান্য অঙ্গে পৌঁছে মারাত্মক জটিলতা ঘটাতে পারে। চার সপ্তাহের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও গুরুতর। উদাহরণস্বরূপ, গ্রুপ বি স্ট্রেপ্টোকক্কাস (GBS) প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণ হলেও নবজাতকের ক্ষেত্রে এটি সেপসিস বা মেনিনজাইটিসের কারণ হতে পারে। এছাড়া ই.কোলাই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হালকা হলেও নবজাতকের ক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া খুব জরুরি।
শিশুর প্রতি স্নেহ প্রকাশের নিরাপদ উপায়
বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা নবজাতককে জড়িয়ে ধরতে এবং স্নেহ দেখাতে চাইলে সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।
- শিশুকে স্পর্শ করার আগে ভালোভাবে হাত ধোয়া সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
- মুখ বা হাত চুম্বন করা এড়ানো উচিত, কারণ এগুলো সংক্রমণের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
- স্নেহ প্রকাশ করতে চাইলে শিশুর মাথার পিছনে বা পায়ে চুমু দেওয়া নিরাপদ।
- অসুস্থ প্রাপ্তবয়স্করা—যাদের সর্দি, কাশি বা ফ্লু রয়েছে—শিশুর কাছাকাছি যাওয়া সম্পূর্ণভাবে এড়ানো উচিত। হালকা উপসর্গও নবজাতকের জন্য গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
এভাবে সতর্কতা অবলম্বন করলে নবজাতককে নিরাপদ রাখার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়জনের স্নেহও প্রকাশ করা সম্ভব।