নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছেন। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে আগুন লাগার কারণে খোলা আকাশের নিচে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউদেল তিন জন মন্ত্রীকে শপথ গ্রহণ করান।
তরুণদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের কারণে আগের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হিমালয়ের দেশটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া জেন-জি বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে পার্লামেন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনে আগুন ধরানো হয়। ২০০৮ সালের গৃহযুদ্ধের পর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
সরকারি তথ্যানুযায়ী, দুই দিনের বিক্ষোভে অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছে এবং আরও ১৯১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরের মার্চে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যত গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
দুর্নীতি, সুশাসন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত মামলায় সুপরিচিত আইনজীবী ওম প্রকাশ আর্যালকে গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার অধীনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও থাকবে।
দীর্ঘদিনের লোডশেডিং সমস্যার সমাধান ঘটানোর জন্য প্রশংসিত নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক পরিচালক কুলমান ঘিসিংকে জ্বালানি, অবকাঠামো, পরিবহন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাবেক অর্থসচিব ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ রমেশ্বর খানালকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বেকারত্ব মোকাবিলা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, যা থেকেই এই গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল।
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নেপালে ১৫–২৪ বছর বয়সীদের এক-পঞ্চমাংশ বেকার। মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ১,৪৪৭ ডলার।
সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগডেল ও প্রেসিডেন্ট পাউদেলের আলোচনার মাধ্যমে কার্কি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আলোচনায় জেন-জি প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। হাজার হাজার তরুণ কর্মী ডিসকর্ড অ্যাপের মাধ্যমে কার্কিকে তাদের নেতা হিসেবে মনোনীত করেন।
রোববার কার্কি বলেন, “আমি এই পদ নিতে চাইনি, তবে জনগণ আমাকে দায়িত্ব নিতে বাধ্য করেছে। আমার সরকার জেন-জির চিন্তাধারার ভিত্তিতে কাজ করবে। তরুণরা চায় দুর্নীতি নির্মূল, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক সমতা।”