পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হামিদুল আলম মিলনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তিনি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সন্তান। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গত ১০ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে তাকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এক মাসের অসুস্থতার ছুটির আড়ালে মিলন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে স্ত্রী শাহজাদী আলম লিপির নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে নির্বাচনী কৌশলও সাজিয়েছিলেন।
একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা নির্বাচনী প্রচারণায় তার সরাসরি অংশগ্রহণের খবর পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিসিপ্লিন উইং তদন্ত শুরু করে। তদন্তে প্রমাণিত হয়, হামিদুল আলম মিলন সরকারি চাকরির বিধি ভঙ্গ করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) এবং সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৮-এর ৪৫(১) ধারার আওতায় ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিরপেক্ষতা হারানো, রাজনৈতিক প্রচারণায় যুক্ত হওয়া এবং দায়িত্ব থেকে বিরত থাকা বিষয়গুলো তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হিসেবে ধরা হয়েছে।
হামিদুল আলম মিলনের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল তৃণমূল পর্যায়ে, ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে তিনি অতিরিক্ত ডিআইজি পর্যন্ত পৌঁছান। দায়িত্বে থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা ও অভিযান পরিচালনা করেছেন। তবে তার ক্যারিয়ারে বিতর্কও লেগেই ছিল—রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, অতিরিক্ত প্রভাব প্রয়োগ এবং সমালোচিত সিদ্ধান্ত তাকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
স্থানীয়দের মতে, সারিয়াকান্দি-সোনাতলা এলাকায় তার পরিচিতি শুধু পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নয়, স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকায় তার ভূমিকা এবার প্রমাণিত হলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে মিলনের কর্মকাণ্ড শৃঙ্খলাভঙ্গ, অনৈতিক ও নীতিবিরুদ্ধ। এজন্য তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের শাস্তি শুধু একজন কর্মকর্তার জন্য নয়, গোটা প্রশাসনের জন্যও একটি বার্তা—সরকারি চাকরিজীবীরা যদি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন, তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনি সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সব দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বাদ পড়েছেন।