গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করছে, যা যৌথভাবে তৈরি করেছে ইসরায়েল ওয়েপনস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ভারতের আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এই নতুন এআই-চালিত অস্ত্র ব্যবস্থা ‘আরবেল’ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, এটি এমন প্রযুক্তি যা অপারেটরের প্রাণঘাতী ক্ষমতা প্রয়োগের পরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি করে। আরবেল স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র যেমন টাভোর, কারমেল ও নেগেভকে এমন সিস্টেমে রূপ দেয়, যা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুতে আরও নির্ভুল ও কার্যকর হামলা সম্ভব করে।
‘আরবেল’ নামটি বাইবেল থেকে নেওয়া হলেও এটি সেই শহরের নাম, যা ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি গ্রাম হিত্তিন দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল। অস্ত্রটি প্রথমবার ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে গুজরাটের গান্ধীনগরের প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে প্রকাশ করা হয়। সেখানে এটিকে ইসরায়েল ওয়েপনস ইন্ডাস্ট্রিজ ও ভারতের আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেসের যৌথ উদ্যোগ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
২০২৪ সালের এপ্রিলেও গাজার যুদ্ধে অস্ত্রটি প্রদর্শিত হয় এবং তখন এটিকে প্রথম কম্পিউটারাইজড অস্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যদিও আদানির নাম উল্লেখ করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, যন্ত্রাংশ উভয় পক্ষ মিলিতভাবে তৈরি করেছে, তবে সংযোজন ইসরায়েলে হয়েছে। আদানির নাম বাদ রাখার কারণ হিসেবে যুদ্ধকালীন জনরোষ বা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা এড়ানোকে দায়ী করা হচ্ছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক গিরিশ লিঙ্গান্না বলেন, আরবেল আধুনিক যুদ্ধে এআইয়ের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার প্রদর্শন করে, তবে এর প্রাণঘাতী ক্ষমতা ও অপব্যবহারের ঝুঁকি নৈতিক দিক থেকে ভয়াবহ। সাংবাদিক অ্যান্টনি লোয়েনস্টাইন উল্লেখ করেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে প্রকৃত অস্ত্র পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং হামলার লক্ষ্য সাধারণ মানুষ—হামাস নয়।
লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক নোয়া সিলভিয়া বলেন, দক্ষতার আড়ালে এসব অস্ত্র ধ্বংসযজ্ঞ বাড়াচ্ছে। ইসরায়েলি সেনারা যেভাবে শিশুদের টার্গেট করছে, আরবেল সেই হত্যা প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করছে।