Tuesday, September 16, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়দলীয় মতবিরোধে ঝুলে আছে জুলাই সনদ, অনিশ্চয়তা কাটেনি”

দলীয় মতবিরোধে ঝুলে আছে জুলাই সনদ, অনিশ্চয়তা কাটেনি”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ধারাবাহিক বৈঠক ও আলোচনা করলেও বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মূল সংকট তৈরি হয়েছে প্রণয়ন নয়, বরং বাস্তবায়নের পদ্ধতি ঘিরে। বিশেষ করে সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং নির্বাচনপূর্ব সংস্কার বাস্তবায়নের প্রশ্নে তীব্র মতভেদ থেকেই অনিশ্চয়তা কাটছে না।

কমিশন বলছে, এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। অন্যদিকে দলগুলো মনে করছে, সনদ ঘোষণা ও কার্যকর করা সরকারের এবং কমিশনের দায়িত্ব। গত রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে বৈঠক হলেও কোনো সমাধান মেলেনি। বরং তাঁর বক্তব্যে দায় চাপানো হয়েছে রাজনৈতিক দলের ওপর, যা নেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। যদিও ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এ অবস্থায় চারটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতি চালুর দাবিতে তিন দিনের অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি জুলাই সনদ ঝুলে যাচ্ছে?

কমিশনের মেয়াদ আবারও এক মাস বাড়ানো হয়েছে, যা এখন চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এর আগে ১২ আগস্ট একবার এবং তারও আগে ১২ ফেব্রুয়ারি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এছাড়া ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা এর সদস্য।

সূত্র জানায়, ৭ দফার ভিত্তিতে সনদের খসড়া দলগুলোকে ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। তবে সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি ভিন্ন অবস্থানে রয়ে গেছে। বিএনপি মনে করে এসব পরিবর্তন কেবল আগামী সংসদ গঠনের পরই সম্ভব। অন্যদিকে জামায়াত চাইছে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন। এনসিপি চায় গণপরিষদ গঠন করে সাংবিধানিক সংস্কার কার্যকর করা হোক। ফলে এখনো কোনো একক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “মূল সংকট বাস্তবায়নের পথ নিয়ে—কীভাবে এবং কখন বাস্তবায়ন হবে।” তিনি এটাও স্বীকার করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ইচ্ছা তৈরি হয়েছে, যা ইতিবাচক। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনীতিবিদদেরই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সাংবিধানিক সংস্কার সংসদ ছাড়া বাস্তবায়নের কোনো আইনি উপায় নেই। অপরদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহের মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে সবই সম্ভব, যেমনটি ১৯৯১ সালে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে হয়েছিল। এনসিপি গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কারকে দীর্ঘস্থায়ী করার পক্ষে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মো. সাহাবুল হক মনে করেন, জুলাই সনদ কার্যকর হলে এটি হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যদি সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, সনদটি ইতিহাসে ব্যর্থ দলিল হিসেবেই থেকে যাবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments