Tuesday, September 16, 2025
spot_imgspot_img
Homeসর্বশেষবাংলাদেশ তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিশ্বে দ্বিতীয়: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব

বাংলাদেশ তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিশ্বে দ্বিতীয়: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ ক্রমেই একটি ‘হটস্পট’-এ পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যা শুধু পরিবেশকেই প্রভাবিত করছে না, বরং স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলছে। মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে তাপের প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সৈয়দুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার মিস ইফফাত মাহমুদ এবং সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ওয়ামেক এ. রাজা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তারা জানান, ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ‘অনুভূত তাপমাত্রা’ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪.৫ ডিগ্রি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে গরম ৯টি বছর, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর পরিস্থিতি ছিল ঢাকায়। এই সময়ে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৪ ডিগ্রি, যা দেশের গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়ন, গাছপালা উজাড় ও কংক্রিট-ভিত্তিক উন্নয়ন তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি:
গরমে শারীরিক ও মানসিক রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি কাশি শীতে ৩.৩% হলেও গ্রীষ্মে বেড়ে ৬% হয়। ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় ঝুঁকি ২২.৭% বৃদ্ধি পায়। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং প্রবীণ ও সাধারণ মানুষ তাপজনিত ক্লান্তিতে ভোগেন। ডায়রিয়ার হার গ্রীষ্মে ৪.৪%, যা শীতে ১.৮%। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন শিশু ও নারী।

মানসিক স্বাস্থ্য:
গরমে বিষণ্নতার হার ২০% এবং উদ্বেগ ১০%। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় বিষণ্নতা ২৩.৮% এবং উদ্বেগ ৩৭.১% বৃদ্ধি পায়।

অর্থনৈতিক প্রভাব:
গরমে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় ২০২৪ সালে আড়াই কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে, যা ১.৩৩–১.৭৮ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি তৈরি করেছে। এটি জিডিপির ০.৩–০.৪% ক্ষতি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই ক্ষতি জিডিপির ৪.৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

সুপারিশ:
১. জাতীয় প্রস্তুতি জোরদার করা ও তাপপ্রবাহ মোকাবিলার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. স্বাস্থ্য খাতকে প্রস্তুত করা, বিশেষ করে গরম-সম্পর্কিত জরুরি সেবা।
৩. তাপমাত্রা সহনশীল আবাসন ও ছায়াযুক্ত কর্মপরিবেশ তৈরি করতে প্রযুক্তি ব্যবহার।
৪. নির্ভরযোগ্য ও বিস্তারিত আবহাওয়া তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং সতর্কতা ব্যবস্থা।
৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অর্থায়ন নিশ্চিত করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বৈশ্বিক সহায়তা থাকলে বাংলাদেশ এই তাপপ্রবাহের ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments