১৯৩২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মহীরুহ স্যার রোনাল্ড রস পরলোকগমন করেন। যুক্তরাজ্যের পুটনি হিথে মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি ম্যালেরিয়ার সংক্রমণের রহস্য উদ্ঘাটন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন।
১৮৫৭ সালের ১৩ মে ভারতের এক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তার পরিবারে জন্ম নেন রস। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আকর্ষণ ছিল তার। পরে লন্ডনে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন শেষে গবেষণার জগতে প্রবেশ করেন।
ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে ম্যালেরিয়া ছিল ভয়াবহ মহামারি। বহু বিজ্ঞানী এর রহস্য উদ্ঘাটনে চেষ্টা চালালেও সফল হননি। অবশেষে ১৮৯৭ সালে রোনাল্ড রস প্রমাণ করেন যে অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে মানুষের শরীরে প্রবেশ করায়। এই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯০২ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি নাইট উপাধি, ইউরোপের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক সদস্যপদ এবং বেলজিয়ামের ‘অর্ডার অব লিওপোল্ড II’-এর মতো স্বীকৃতি পান।
ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-দুঃখ
বিজ্ঞানী হিসেবে বিশ্বব্যাপী সম্মান পেলেও ব্যক্তিজীবনে রস ছিলেন বেদনাভারাক্রান্ত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বড় ছেলেকে হারান, পরবর্তীতে বড় মেয়ে ও স্ত্রীও মারা যান। এতে তিনি একেবারেই একাকী হয়ে পড়েন। জীবনের শেষ দিকে তিনি মনে করতেন, তার গবেষণার যথাযথ আর্থিক মূল্যায়ন হয়নি।
রস ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। চিকিৎসা গবেষণার পাশাপাশি তিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক ও সংগীতে কাজ করেছেন। তার লেখা ‘দ্য চাইল্ড অব ওশান’, ‘দ্য প্রিভেনশন অব ম্যালেরিয়া’ এবং আত্মজীবনী ‘দ্য মেমোয়ার্স’ আজও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।
১৯২৭ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ১৯৩১ সালে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আরও ভেঙে পড়েন। অবশেষে ১৯৩২ সালে লন্ডনের রস ইনস্টিটিউটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পুটনি ভেল কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে সমাহিত করা হয় তাকে।
রোনাল্ড রসের আবিষ্কার বিশ্বকে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রামে এক নতুন দিশা দিয়েছে। তার অবদান আজও চিকিৎসা গবেষণায় অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।