বিভিন্ন আলোচনার পর অবশেষে পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। শিগগিরই এসব ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে, এরপর থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। ধাপে ধাপে একীভূতকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক একীভূত হয়ে গড়ে উঠবে নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, যার সম্ভাব্য নাম রাখা হয়েছে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। এ ব্যাংকের জন্য দ্রুত লাইসেন্স ইস্যু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সম্মতি দিলেও এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আপত্তি তোলে। শেষ পর্যন্ত বিশেষ বোর্ড সভায় পাঁচটি ব্যাংক একীভূতের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, সভায় পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, একীভূতকরণের যৌক্তিকতা ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা উপস্থাপন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্যালোচনা শেষে বোর্ড পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দেয়, ফলে আর কোনো আইনি জটিলতা থাকছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে অস্থায়ী প্রশাসক ও চারজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। এ নিয়োগ কার্যকর হলে বর্তমান বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। তবে বোর্ড পুরোপুরি বাতিল হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
একীভূতকরণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে, যার মধ্যে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেবে সরকার। পরে বেসরকারি খাতে ধাপে ধাপে শেয়ার বিক্রি করে সরকারের অর্থ ফেরত আনার পরিকল্পনা রয়েছে। বড় আমানতকারীদের শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে, ছোট আমানতকারীরা চাইলে তাদের টাকা তুলে নিতে পারবেন।
গত সরকারের সময়ে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ব্যাংকগুলোতে ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ খেলাপি হয়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতেই একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন আইনের খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে বোর্ড। নতুন আইনে গভর্নরের মেয়াদ ছয় বছর নির্ধারণ করা হয়েছে, যা একবার পুনর্নিয়োগযোগ্য। একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে ডেপুটি গভর্নরের ক্ষেত্রেও। নিয়োগ বা অপসারণ উভয় ক্ষেত্রেই সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ অপরিহার্য করা হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা নেবে না। তবে অর্থমন্ত্রীকে সভাপতি করে একটি সমন্বয় পরিষদ গঠিত হবে, যা অর্থনীতি ও মুদ্রানীতি বিষয়ে পরামর্শ দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, “দুই বছরের মধ্যে একীভূত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আপাতত বিশেষ দল ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নিচ্ছে। প্রক্রিয়া শেষে বর্তমান পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা বাতিল হয়ে যাবে।”