জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গত বছরের ১৯ জুলাই সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিল। তিনি এই মন্তব্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের প্যানেলের সামনে, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়ার সময়।
নাহিদ ইসলাম জানান, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই রাতে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। নিহতদের স্মরণে দেশের সকল শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে এতে অংশ নিতে আহ্বান জানানো হয়। ১৮ জুলাই সারাদেশের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে, বিশেষত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের নেতারা জীবনের হুমকির কারণে আত্মগোপনে চলে যান।
তিনি বলেন, ১৮ জুলাই সারাদেশে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন এবং রাতের বেলা ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করা হয়। ১৯ জুলাই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ ও আওয়ামী দলের সন্ত্রাসীরা নির্বিচার গুলি চালায়। এই দিনই তারা বুঝতে পারেন যে সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, কারণ আহত ও নিহতদের খবর মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছিল না।
নাহিদ আরও উল্লেখ করেন, কিছু মিডিয়া হয়তো চেষ্টা করেছিল প্রতিবেদন দেওয়ার, তবে ১৮ ও ১৯ জুলাই আমরা সেসব দেখতে পাইনি। অনেক প্রচার বিভ্রান্তিকর শিরোনামে হতো, যা দেখিয়ে দিত যে আন্দোলন স্থগিত বা সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথে যাচ্ছে। বাস্তব তথ্য মিডিয়ায় আসছিল না। এই প্রেক্ষাপটেই তিনি বলেন, সরকার মিডিয়াকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল।
নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ বুধবার বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে, তবে শেষ না হওয়ায় এটি বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম, সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
এদিন সকালেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন।